টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সরকারী স্যালাইন এর ভিতরে মিলেছে শ্যাওলা! শুধু তাই নয় সেই শ্যাওলাযুক্ত স্যালাইন এক রোগীর দেহে প্রবেশ করানোসহ রোগীর লোকজন বাধা দিলে কর্তব্যরত নার্স তাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল শহরের দিঘুলিয়ার মৃত আবুল কাসেমের ছেলে মোহাম্মদ শামীম এই সাধারণ ডায়েরি করেন।
জিডিতে মোহাম্মদ শামীম উল্লেখ করেন, গত ১৬ এপ্রিল তার মা টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পিয়ন সাহেরা খাতুন ডায়রিয়ায় আক্রাšত্ম হন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৯নং ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১২নং বেডে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে কর্তব্যরত নার্স একটি কলেরা স্যালাইন নিয়ে আসেন সাহেরা খাতুনের দেহে পুশ করার জন্য। এ সময় শামীম দেখতে পান ওই স্যালাইনের ভিতরে শ্যাওলা ও ফাঙ্গাস জমে আছে। তখন শামীম ওই স্যালাইনটি পুশ করতে নিষেধ করলে কর্তব্যরত নার্স তার সাথে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বলেন এই স্যালাইন ভাল আছে। ততক্ষণে প্রায় দুই মি.লি. স্যালাইন সাহেরা খাতুনের দেহে পুশ করা হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে শামীম তার মায়ের শরীরে স্যালাইন পুশ করা বন্ধ করে দেন।
জিডিতে শামীম আরো উল্লেখ করেন, শ্যাওলা ও ফাংগাসযুক্ত পুরো স্যালাইনটি প্রবেশ করানো হলে তার মায়ের মৃত্যুও ঘটতে পারত। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় তার মায়ের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সাহেরা খাতুন বলেন, এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। হাসপাতাল কর্তপক্ষ আমাকে জিডি তুলে নিতে বলেছে। পাশাপাশি আমি যেন কোন মামলা না করি সে ব্যাপারেও বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে। এ ঘটনায় আমি আইনী সহযোগীতা নেব। তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য এমনটাই করেছিল বলে আমি ধারণা করছি।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা না দিয়েই ঘটনার দুইদিন পরে আমাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।
তার ছেলে শামীম বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর যেনো কারও সাথে এমন ঘটনা না ঘটে। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সরেজমিনে অভিযুক্ত ওই নার্সকে হাসপাতাল গিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্ব প্রাপ্ত ইনচার্জ ফাতেমা খাতুন বলেন, ওইদিন কল্পনা নামে ওই নার্স সাহেরা খাতুনকে স্যালাইন পুশ করতে গিয়েছিল। কিন্তু সে ময়লা দেখে পুশ করেনি বলেও তিনি দাবি করেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সাইদুর রহমান বলেন, কোন কোন সময় স্যালাইনের প্যাকেটে ছেঁড়া বা ফুঁটো থাকে যেখানে ফাংগাস পড়তে পারে। প্যাকেটের গায়েও ময়লা থাকে। ওইদিন নার্স বুঝতে না পেরে ওয়াশ না করেই স্যালাইনটি পুশ করতে নিয়ে যায় কিন্তু ময়লা দেখে আর পুশ করেনি। ময়লাটি স্যালাইনের ভিতরে ছিল না, বরং সেটি স্যালাইনের বাইরে ছিল। স্যালাইনের ভিতরে শ্যাওলার মত দেখা গেলেও তা শ্যাওলাই ছিল কিনা সেটা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, শামীম যে অভিযোগ করেছ, সেটি সত্য হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এতে আমাদের কোন গাফিলতি নেই। আমরা সব সময়ই রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। আমরা কখনো রোগীকে মেরে ফেলার জন্য চিকিৎসা সেবা দেই না, তাকে আমরা বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করি।
এ ব্যাপারে কোন তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তখনি আমরা দেখেছি। এ ব্যাপারে কোন তদন্ত কমিটি হয়নি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...