টাঙ্গাইলের বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর মেরামত ও খনন প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ বাংলা ড্রেজার। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পরিচালনায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দের ওই প্রকল্পে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়ে খেলার মাঠ ভরাট করা হচ্ছে। এক পুকুর আর মাঠেই চলছে তিন প্রকল্পের কাজ।
ইতোপূর্বেও এ ধরণের প্রকল্প নেয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এ নিয়ে জনমনে যেমন সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। তেমনি অভিযোগ উঠেছে পুকুর খনন আর ওই মাঠ ভরাট প্রকল্পের টাকা হরিলুটের।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির অভিযোগ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী অলিদ ইসলাম পদের ক্ষমতাবলে প্রকল্পে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ থাকা স্বত্তেও অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে শুরু করেছেন পুকুর খনন। বেকু বা মাটিকাটার শ্রমিক না নিয়ে যতসামান্য টাকায় প্রকল্পের খনন কাজটি শেষ করতেই বসানো হয়েছে ওই ড্রেজার।
এতে ওই স্কুলের কয়েকটি ভবন, দেয়ালসহ আশপাশের বাড়িগুলো পরেছে চরম ঝুঁকির মুখে। কাজটিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত থাকায় এটি বন্ধে কিছুই করতে পারছেন না স্থানীয়রা। অবৈধ ড্রেজারের ভয়াবহতা জানা স্বত্তেও সেটি বন্ধে কোন উদ্যোগও নিচ্ছেন না উপজেলা প্রশাসন।
এছাড়াও চলতি বছর খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাওয়া টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় ড্রেজার দিয়ে স্কুলের পুকুর থেকে তোলা মাটি ফেলা হচ্ছে ওই মাঠে।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয়রা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ড্রেজার দিয়ে নিজ জমির মাটি তুললেও যেখানে দেয়া হচ্ছে জেল জরিমানা। আর সেই শাস্তি দেয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাই এখন অবৈধ বাংলা ড্রেজারের ব্যবহার করছেন প্রকল্পের কাজ।
খেলার মাঠ ভরাটে নিয়োজিত ড্রেজার শ্রমিক সজিব জানান, তিন ফুট পরিমাণ ভরাটের চুক্তি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। দশদিনে মাঠের প্রায় ত্রিশ শতাংশ জমির দেড় ফুট পর্যন্ত ভরাট হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭৭ সালে বাসাইল উপজেলা পরিষদ ভবনের পিছনে প্রায় ১’শ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয় বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলে রয়েছে তিনটি পাকা ভবনসহ চারপাশের সীমানা প্রাচীর।
বাসাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মতিয়ার রহমান গাউস বলেন, উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে হরিলুট করতেই আওয়ামীলীগের কাউকে সম্পৃক্ত রাখা হয়না। ইতোপূর্বেও ওই মাঠটি ভরাট করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম। তবে এখনও কেন মাঠটির উন্নয়ন সম্পন্ন হয়নি প্রশ্ন তুলেন তিনি।
এখন নতুন করে আবার স্কুলের পুকুর মেরামত ও খনন প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করছে অবৈধ ড্রেজার। আর সেই মাটি দিয়েই ভরাট করছেন খেলার মাঠ। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েও এই ড্রেজার চালানোর ফলে স্কুলের কয়েকটি ভবন, দেয়ালসহ প্রতিবেশিদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সেটিও মনে করছেননা তিনি। বিদ্যালয়ের পুকুরটি খননসহ মেরামত আর মাঠ ভরাট প্রকল্পের টাকা আবার হরিলুটের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাসাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম বলেন, পৌরশহরে যে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে পৌরপ্রশাসনকে অবগত করার বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া আছে। তবে বাসাইল উপজেলায় রাষ্ট্রীয় ওই বিধানের কোন গুরুত্ব নেই। তাই ওই স্কুল আর খেলার মাঠটি পৌর শহরের মধ্যে হলেও এর কোন উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ প্রসঙ্গে তাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না উপজেলা প্রশাসন। তবে স্কুলের পুকুর মেরামত ও খনন প্রকল্পের মাটি দিয়ে দ্বিতীয় প্রকল্প মাঠ ভরাটের কাজ কিভাবে করা হচ্ছে, এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনিও।
স্কুলের পুকুর ড্রেজার দিয়ে খনন প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম মিঞা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পরিকল্পনা এবং স্কুল ভবন ও দেয়ালের ক্ষতি না হওয়ার আশ^াসেই চলছে ড্রেজার দিয়ে পুকুর খননের কাজ। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের তত্ত¡াবধানেই হচ্ছে ওই খনন কাজ। স্কুলের পুকুর খননের মাটি উপজেলা পরিষদ মাঠে ফেলা হলেও সেই মাটির টাকা স্কুলকে দেয়া হচ্ছেনা। তবে সম্প্রতি টাকার বিনিময়ে এই স্কুলের মাঠ ভরাটে ফেলা হয়েছিল মাটি বলেও জানান তিনি।
গ্রামীন উন্নয়ন (টিআর) প্রকল্পের আওতায় বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর মেরামত ও খননে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ আর চলতি বছর উপজেলা পরিষদের মাঠটির উন্নয়নে দুই লাখ টাকার টিআর এবং দুই লাখ টাকার কাবিখা প্রকল্প দেয়ার তথ্য জানালেও কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হোসেন বলেন, ড্রেজার অবৈধ। এরপরও দেশের বড় বড় নানা মেগা প্রকল্পের কাজ ড্রেজার দিয়েই সম্পন্ন হচ্ছে।
ড্রেজার অবৈধ এ কথা স্বীকার করে বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, মাত্র তিন লাখ টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পে বেকু দিয়ে খনন ও মরামতের ব্যয় বহন করা সম্ভব না বলেই ড্রেজার দিয়ে স্কুলের পুকুরটি খনন করা হচ্ছে। এতে স্কুলের ভবন দেয়াল বা পাশ^বর্তী ঘরবাড়িগুলোর ক্ষতি হবে না বলে জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...