০৩:৫৭ পিএম | টাঙ্গাইল, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

টাঙ্গাইলে প্রস্তাবিত ধলেশ্বরী উপজেলা নিয়ে বিতর্ক

ডা. ওয়াজেদ খান | টাঙ্গাইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০২০ | |
, টাঙ্গাইল :

টাঙ্গাইল জেলায় ধলেশ্বরী নামে নূতন একটি উপজেলা করার চেষ্টা চলছে। মির্জাপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা থেকে দু’টো করে ইউনিয়ন কেটে নিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে কথিত ধলেশ্বরী উপজেলার। এ সংক্রান্ত সরকারী কোন ঘোষণা আসেনি। তবে জানা গেছে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে জোর তদবির করছে একটি মহল। সংবাদটি সংশ্লিষ্ট তিনটি উপজেলায় চাউর হলে এলাকাবাসী হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ মুখর। ব্যাপক কথা চালাচালি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
যে ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে নূতন উপজেলার কথা চলছে সেসব ইউনিয়নের মানুষ ফুঁসে উঠছেন। ফেটে পড়ছেন ক্ষোভে। তারা বর্তমানে যে উপজেলার অংশ হিসেবে আছেন থাকতে চান সেভাবেই। নূতন কোন উপজেলার বাসিন্দা হওয়ার ঘোর বিরোধী তারা। এনিয়ে ইতোমধ্যে সেসব ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বত:স্ফূর্ত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা। স্থানীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এসব প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। দলমত নির্বিশেষে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এমন একটি সর্বদলীয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বানাইল ইউনিয়নের স্থানীয় ভাবখন্ড প্রাইমারী স্কুল মাঠে। মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ও আনাইতারা ইউনিয়নের সকল শ্রেনীর পেশা মানুষ সমবেত হন এই সমাবেশে। মির্জাপুর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইউনিয়ন দু’টি কথিত ধলেশ্বরী উপজেলার সাথে সংযুক্ত করার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন সমাবেশকারীরা। তারা এধরণের প্রচেষ্টাকে অদূরদর্শী ও অন্তর্ঘাতমূলক বলে মন্তব্য করেন। বিক্ষোভকারীরা অঙ্গীকার করেন যেকোন মূল্যে এই চক্রান্ত রুখে দেয়ার। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন তারা। প্রসঙ্গটি নিয়ে তিন উপজেলার ৬ ইউনিয়নের মানুষের মাঝে এখন বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। টাঙ্গাইলে নূতন উপজেলা করার প্রস্তাবের নেপথ্যে সরকারের রাজনৈতিক কোন অঙ্গীকার আছে বলে আমাদের জানা নেই। ফলে কথিত ধলেশ্বরী উপজেলা করার গোপন উদ্যোগ জনমনে অসন্তুষ্টির পাশাপাশি সৃষ্টি করেছে ব্যাপক বিতর্কের। প্রশ্ন উঠেছে নূতন উপজেলার যৌক্তিকতা নিয়ে।
টাঙ্গাইলে কেন আরো একটি নূতন উপজেলা?
বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ টাঙ্গাইল। ১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহ থেকে পৃথক করে মহকুমা টাঙ্গাইলকে পরিণত করা হয় জেলায়। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা টাঙ্গাইল। এক হাতী, চারপুর ও তিন আইল অর্থাৎ কালিহাতী, মির্জাপুর, নাগরপুর, মধুপুর, গোপালপুর, টাঙ্গাইল, ঘাটাইল ও বাশাইল থানা নিয়ে গঠিত হয় এই জেলা। পরবর্তীতে ভূয়াপুর, সখিপুর, ধনবাড়ী ও দেলদুয়ার সংযুক্ত হয় এই তালিকায়। ৪০ লাখ মানুষের এই জেলার থানা গুলো পরবর্তীতে উপজেলায় উন্নীত করা হলে সাড়া দেশের মধ্যে প্রথমে আদর্শ উপজেলা হিসেবে বেছে নেয়া হয় মির্জাপুরকে। উন্নয়নের দিক থেকে টাঙ্গাইল অনেক পিছিয়ে ছিলো। যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতু, রেল লাইন ও অতি সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল হাইওয়ে চার লেনে রূপান্তরিত হওয়ায় এলাকাটিতে জীবন-জীবিকা অনেকটাই সহজতর হচ্ছে। তবে গোটা জেলার জন্য এসব উন্নয়ন মোটেও যথেষ্ট নয়। দক্ষিণ টাঙ্গাইল খ্যাত মির্জাপুর ও নাগরপুরের বড় একটি এলাকা এখনো রয়ে গেছে অনুন্নত-অবহেলিত। আমার বাড়ি মির্জাপুরের বানাইল গ্রামে। মির্জাপুরের সাথে আমাদের সম্পর্ক নাড়ীর। ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সবধরণের সেবামূলক কর্মকান্ড ও যোগাযোগ আমাদের মির্জাপুরের সাথে। এক সময় আমরা মির্জাপুর যাতায়াত করতাম পায়ে হেঁটে। এখন রাস্তা-ঘাট হওয়ায় মাত্র কয়েক মিনিটেই পৌছা যায় মির্জাপুর সদরে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা শহরের প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত মির্জাপুর। এই উপজেলার বানাইল ও আনাইতাড়া ইউনিয়নবাসী কেন মির্জাপুর ছেড়ে কল্পিত ধলেশ্বরীর চরে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করবে? নাগরপুর ও দেলদুয়ারের ৪টি ইউনিয়নবাসীর প্রশ্নও এক এবং অভিন্ন। ময়মনসিংহকে বিভাগে উন্নীত করা হলে টাঙ্গাইল জেলাকে তাতে অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব আসে। টাঙ্গাইল জেলাবাসী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তারা থেকে যান ঢাকা বিভাগের অধীনে। স্বাভাবিকভাবে এসব ইউনিয়নবাসীও থাকতে চান নিজ নিজ উপজেলায়। অকারণে মানুষের এ আকাংখার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
দক্ষিণ টাঙ্গাইলের উন্নয়ন বা এলাকাবাসীর ভাগ্যোন্নয়নের সদিচ্ছা থাকলে তাদের জন্য অনেক কিছুই আছে করণীয়। বিশেষ করে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প কারখানা ও কৃষি উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে হবে এই এলাকায়। যেমন-
১) মির্জাপুরের পাকুল্ল্যা থেকে সাটুরিয়া হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত একটি হাইওয়ে তৈরী করতে হবে। যা ঢাকা-টাঙ্গাইল হাইওয়েকে ঢাকা আরিচার হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত করবে। এতে পাল্টে যাবে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবন মান।
২) মির্জাপুর এবং টাঙ্গাইল সদর থেকে নাগরপুর পর্যন্ত রাস্তা দু’টোকে প্রশস্ত ও উন্নত করা। এছাড়া অন্যান্য পাকা রাস্তায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
৩) মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। নানাকারণে এলাকাবাসী কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এ হাসপাতাল থেকে। এব্যাপারে সরকারী নজরদারী প্রয়োজন। এছাড়া মির্জাপুরের আনাইতাড়া ইউনিয়নে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
৪) শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে জামুর্কী নওয়াব স্যার আব্দুল গণি হাইস্কুলটি সরকারীকরণ। অন্যান্য হাইস্কুলগুলোর উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। এ এলাকার বিপুল সংখ্যক তরুণ বিদেশে কর্মরত। কারিগরি প্রশিক্ষণের অভাবে বিদেশে তারা অতিশয় নিম্নবেতনে কাজ করছেন। মির্জাপুর এবং নাগরপুর উপজেলার সংযোগস্থলে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এখন এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।
৫) দক্ষিণ টাঙ্গাইলে শিল্প কারখানা ও কৃষির আধুনিকায়ন প্রয়োজন। এলাকার তরুণ তরুণীদের বেকারত্ব কমাতে শিল্প ও কৃষিখাতে উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
৬) নূতন উপজেলা নয় বরং মির্জাপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায় দুর্গম এলাকায় একটি আধুনিক পুলিশ ফাড়ি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে জন নিরাপত্তার স্বার্থে।
৭) লৌহজং নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ এলাকা প্রায় প্রতিবছরই বন্যা কবলিত হয়। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন পুন:খনন। জরুরী ভিত্তিতে এ সকল সমস্যার সমাধান করতে পারলে দক্ষিণ টাঙ্গাইলের চেহারা পাল্টে যাবে। সাধারণ মানুষের প্রাণের এসব দাবি উপেক্ষা করে কোটারী স্বার্থ হাসিলের জন্য নূতন উপজেলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এলাকাবাসীর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। দাঁড়াবে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার পক্ষে।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মারধরের হু সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত এসআই : গ্রেফতার ১৬ মির্জাপুরে গরীব ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ এক পরিবারের ৪জন আহ মির্জাপুরের বাঁশতৈলে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস ধনবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত চলন্ত ট্রেনের ছা‌দ থে‌কে যাত্রীর মর‌দেহ উদ্ধার নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি