০৪:১১ এএম | টাঙ্গাইল, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুর মুক্ত দিবস

রাজাকার মাহাবুব জেলহাজতে, নতুন আঙ্গিকে পালিত দিনটি

মোস্তফা কামাল নান্নু | টাঙ্গাইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ | | ২৪০
, টাঙ্গাইল :

মহান মুক্তিযুদ্ধে মির্জাপুরের অনেক গৌরব গাঁথা ইতিহাস রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর পাক হায়েনাদের পরাজিত করে মুক্ত হয় মির্জাপুর। তবে এ বছরের হানাদার মুক্ত দিবসটি এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট অনেক আবেগের ও আনন্দের। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা ওয়াদুদের বড় ছেলে রাজাকার মাহাবুব ’৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জেলহাজতে রয়েছে। এজন্য এবারের মির্জাপুর মুক্ত দিবসটি মুক্তিযোদ্ধা সহ জনগণের মাঝে নতুন আঙ্গিকে পালিত হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন।

স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান বঙ্গবন্ধু। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশের ন্যায় মির্জাপুরের মুক্তিকামী দেশপ্রেমিকেরা সংঘটিত হতে শুরু করে। মির্জাপুর সদয়কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক নিরজ্ঞন সাহার তত্ত¡াবধানে শুরু হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। এরপর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমান সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুককে আহবায়ক করে গঠিত হয় সংগ্রাম কমিটি। সংগ্রাম কমিটিতে স্থান পায় তৎকালীন ছাত্রনেতা দেওয়ান জুমারত আলী, সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলক, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন সহ আরো অনেকে।

স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিযে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে শুরু করে। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যায় যুদ্ধের জন্য নিজেকে তৈরী করতে। আবার কেউ কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রস্তুত করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

এরই মাঝে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে টাঙ্গাইলে যাবে। এই খবর পাওয়ার পর সংগ্রাম কমিটির নেতা ফজলুর রহমান খান ফারুক সহযোদ্ধা এবং স্থানীয় লোকজন নিয়ে গোপনে পরিকল্পনা শুরু করেন। উপজেলার সাটিয়াচড়া গোড়ান নামক স্থানে পাকিস্তানীদের প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সাথে যোগ দেয় ইপিআর। ২ এপ্রিল দিনব্যাপি চলে বাঙ্কার নির্মাণ এবং প্রতিরোধের নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাতেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন ওই স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়।

৩রা এপ্রিল ভোর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী সাটিয়াচড়া গোড়ান নামক স্থানে পৌঁছার পর ইপিআর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার সম্মুখিন হয়। সেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রথমে পিছু হটে। পরে পাকবাহিনী সংগটিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্থানীয় অনেক নিরীহ মানুষ হত্যা করে। এসময় তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। দিনভর ওই যুদ্ধে ২৯ জন ইপিআর, ছাতনেতা জুমারত আলী সহ ১০৭ জন বাঙালি শহীদ হন।

আর এই প্রতিরোধ যুদ্ধটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ।

এর পর থেকে পাকিস্তানী বাহিনী মির্জাপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অনেক সম্মুখ যুদ্ধও সংঘটিত হয়। তৎকালীন সময় মির্জাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ পাক বাহিনীর সাথে আঁতাত করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে।

৭ মে ১৯৭১ সাল, দিনটি ছিলো শুক্রবার। পাক সেনা ক্যাপ্টেন আইয়ুব খানের নেতৃত্বে এক প্লাটুন সেনা মির্জাপুর আসে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে মির্জাপুর হাটে আসা মানুষ দিকবিদিক ছুটতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে মির্জাপুর বাজার ফাঁকা হয়ে যায়।

পাকবাহিনী মির্জাপুর, পোষ্টকামুরী ও আন্ধরা গ্রামে নিরীহ মানুষের ওপর নগ্ন হামলা চালায়। এসময় তারা বাড়ি ঘর জ্বালিযে দেয়। পৈশাচিক ওই গণহত্যায় সেদিন মারা যায় ৩৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী। পাক সেনারা সেদিন কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এশিয়াখ্যাত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে মির্জাপুরে না পেয়ে ৮ মে নারায়ণগঞ্জের বাড়ি থেকে তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান মেলেনি। তবে জনশ্রæতি আছে যে, তাদেরকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এই গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মাওলানা ওয়াদুদ, তার দুই ছেলে মাহাবুব ও মান্নান বীরদর্পে মির্জাপুরে বসবাস করতে থাকে।

এরপর তারা হত্যা করে পোষ্টকামুরী গ্রামের মাজম আলী শিকদারকে। তার বাসায় আওয়ামীলীগ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে খবরাখবর আদান প্রদান করার জন্য তাকে গুলি করা হত্যা করা হয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। একই গ্রামের জয়নাল সরকারকে ঘরে আটকে রেখে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই মুক্তিযোদ্ধারা মাওলানা ওয়াদুদকে হত্যা করে তার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেন।

এদিকে মির্জাপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁটি তৈরী করা পাক বাহিনীকে উৎখাতের জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন পরিকল্পনা করে। নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরকে পাক বাহিনী দখলমুক্ত করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার পাকবাহিনী পূনঃ দখল করে। এরপর কাদেরিয়া বাহিনীর সহায়তায় ফজলুর রহমান খান ফারুক, শাহ আজাদ কামাল, বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপি ও মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমানের পরিকল্পনায় ১৩ ডিসেম্বর প্রাণপণ যুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধারা মির্জাপুরকে পাক বাহিনীর দখল মুক্ত করে তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানে ইউএনও অফিস ) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।

১৩ ডিসেম্বর দিনটি মির্জাপুরে প্রতিবছর আনন্দঘন পরিবেশে পালন করে থাকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এবছর দিনটি পালিত হবে ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন অনুভুতি নিয়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা ওয়াদুদের বড় ছেলে রাজাকার মাহাবুব এখন জেলহাজতে রয়েছে। স্বাদীনতার ৪৫ বছর পরে মির্জাপুরবাসী ভিন্ন মাত্রার এক বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করবে বলে দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধাদের অভিমত।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মারধরের হু সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত এসআই : গ্রেফতার ১৬ মির্জাপুরে গরীব ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ এক পরিবারের ৪জন আহ মির্জাপুরের বাঁশতৈলে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস ধনবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত চলন্ত ট্রেনের ছা‌দ থে‌কে যাত্রীর মর‌দেহ উদ্ধার নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি