সাজেদা বেগম। বয়স আশির ওপরে। ঘরে পানি উঠেছে। আশ্রয় নিয়েছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের পাশে। সেখানে পলিথিন দিয়ে একটি ছাউনি তৈরি করে রয়েছেন। খেয়ে না-খেয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়কেই তাঁর বসবাস। সাজেদা বেগম বলেন, ‘কেউ দিলে খাই। না দিলে না খাইয়া থাকি। খাইয়াও দিন যাইতাছে, না খাইয়াও দিন যাইতাছে।’
শুধু সাজেদা বেগম নন, তার মতো পাঁচ শতাধিক বন্যাকবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এ সড়কে। সড়কটিই এখন তাদের ঠিকানা। তাদের সবার বাড়ি গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের যমুনা–তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে।
আজ বৃহস্পতিবার দেখা যায়, রাস্তার পাশে কেউ পলিথিন দিয়ে, আবার কেউ টিন দিয়ে কোনোমতে ডেরা তৈরি করে বাস করছেন। অনেক ডেরার নিচে গরু–ছাগল ও মানুষের পাশাপাশি বসবাস।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব মানুষের বেশির ভাগই যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর ও জমিজমা হারিয়েছেন। সব হারিয়ে কেউ সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় অথবা আশপাশের গ্রামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে অথবা কিনে বসবাস করছেন।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার সড়কটিতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া দিনমজুর রহিজ উদ্দিন জানান, এক মাস ধরে এখানে থাকলেও তিনি পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি চিড়া ছাড়া আর কিছুই পাননি। অন্যদেরও অবস্থা তাঁর মতোই।
কৃষক মোস্তফা শেখ জানান, ১৫ বছর আগে তাঁর ছয়আনী পাড়া গ্রামের বাড়ি যমুনায় ভেঙে যায়। তারপর এসে আশ্রয় নেন এই রাস্তার পাশেই সরকারি জায়গায়। সেখানে প্রতিবছর বন্যায় পানি ওঠে। তাই প্রতিবছরই এই রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়।
সড়কে আশ্রয় নেওয়া খানুরবাড়ি গ্রামের মোহর ব্যাপারী জানান, যমুনাপারের মানুষের ভাঙন আর বন্যা নিত্যসঙ্গী। বাড়িতে পানি উঠলেই উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়। সেখানে খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটে।
সড়কটির নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া মালেকা বেগম বলেন, ‘তিন–চার মাস আগে করোনা রোগ আইছে। তহন থিকা কাম–কাজ নাই। এহন আবার বন্যা। অভাব–অনটন আমাগো জানের ওপর দিয়া যাইতাছে।’
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, গোবিন্দাসী–বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে আশ্রয় নেওয়া তাঁর ইউনিয়নের বন্যাকবলিতদের একাধিকবার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাংসদের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংসদ তানভীর হাসান ছোট মনির বলেন, নদীভাঙনের শিকার অনেক মানুষ এলাকায় রয়েছে। বন্যার পানি উঠলে তাঁরা গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে আশ্রয় নেন। তাঁদের স্থায়ীভাবে সরকারি জমিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...