শায়েস্তা খান। মুঘল আমলে বাংলায় টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেতো।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও সুশাসনের জন্য শায়েস্তা খান ছিলেন মশহুর। তার সময়ে বাঙলার রাজধানী ঢাকা বায়ান্ন গলি তেপান্ন বাজারে পরিণত হয়।
ব্যবসাবানিজ্য প্রসারের পাশাপাশি নতুন জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে। মানুষের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ জরুরী হয়ে উঠে।
সে সময়ে আধুনিক কালের মতো পুলিশী ব্যবস্থা না থাকলেও জনশৃঙ্খলা দেখভাল করতেন মুহতাসিব। তিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও মানুষের নৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতেন।
শায়েস্তা খানের আমলে ঢাকার মুহতাসিব ছিলেন আমীর হামজা খান। তিনি খুব কড়া মানুষ ছিলেন।
আইনভঙ্গকারিকে তিনি সহজে ছাড় দিতেননা। তেমনি সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার অভিযোগ নিজ বৈঠকখানায় তিনি সমাধান করতেন।
বিবি তালাকের কোনো অভিযোগ কাজীর নিকট পেশ করার আগে তিনি প্রায়ই শান্তিপূর্ণ ফয়সালা দিতেন।
তার যুগান্তকারি সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকার দারোগা-ই-ডাকচৌকি শেখ সেলিম জাহানের দাম্পত্য কলহের অবসান ঘটে। ইরান দুহিতা পারভীন মুশতারী খানমের সংসার টিকে যায়।
পরবর্তীতে সেলিম-পারভীন দম্পতির ঘরে জন্ম নেয়া ছয় সন্তান পরবর্তী মুঘল প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুঘল ঢাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় মুহতাসিব আমীর হামজা খানের কৃতিত্ব আজো মানুষ স্মরণ করেন। নানা ঘটনাক্রমের মাধ্যমে মুহতাসিব পদবীর রূপান্তর ঘটে আধুনিক পুলিশ প্রশাসন গড়ে উঠে।
দেশের গণমানুষের নিরাপত্তা এবং সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা আলাচনা সমালোচনা সত্বেও চরম বিপদের সময় মানুষ পুলিশের নিকটই আশ্রয় নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
দৈনন্দিন নানা জটিল সমস্যা থেকে শুরু করে বউ তালাক পর্যন্ত মানুষকে প্রথমে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়।
বউ তালাক নিয়ে যতই হাসিঠাট্রা করা হোক না কেন অধিকাংশ বিবি তালাকের নেপথ্যে থাকে অশ্রæসজল কাহিনী। আর একজন যোগ্য পুলিশ অফিসারের কোমল হৃদয়ানুভূতি ও বিচারবুদ্ধি বিয়োগান্তক কাহিনীকে মিলনাত্মক ড্রামায় পরিণত করতে পারে।
সম্প্রতি এমন একটি ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ নাটকের অনুঘটকের আসনে অবতীর্ণ হন টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত সিনিয়র পুলিশ সুপার আমীর খসরু। তার সময়োচিত হস্তক্ষেপে ভেঙ্গে যাওয়া ঘর জোড়া লাগে। দুই বছরের বাচ্চা পুণরায় এক সাথে ফিরে পায় বাবামাকে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বছর ছয়েক আগে হাদিরা ইউনিয়নের হাউলভাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র ফারুখ হোসেন গোপালপুর পৌরসভার ডুবাইল গ্রামের আকবর আরীর কন্যা লাকী খাতুনকে ৯০ হাজার টাকা কাবিনমূলে বিয়ে করে।
বিয়ের দুই বছর পর লাকী দম্পতির কোল জুড়ে আসে এক সন্তান। কিন্তু সুখের সংসারে প্রবেশ করে যৌতুকের ঘোরতর দাবি। ফলে সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি।
স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের এ দাবি এক পর্যায়ে নির্যাতনে রূপ নেয়। তিন লক্ষ টাকার দাবি না মেটানোতে লাকীকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
শিশু সন্তান নিয়ে লাকি উঠেন বাবার সংসারে। এর মধ্যে ৫ জুন বাবা-মার পরামর্শে ফারুখ হোসেন লাকিকে তালান দেন। অসহায় লাকীর পরিবার প্রতিকার দাবি করে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন।
এমতাবস্থায় গোপালপুর সার্কেলের সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু সম্প্রতি বাদীবিবাদী উভয় পক্ষকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। কয়েক ঘন্টাব্যাপি বৈঠকেও উভয় পক্ষকে এক বিন্দুতে মেলাতে অসমর্থ হন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না।
তাই স্বামীস্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে আলাদা করে বসেন। অনেক মান-অভিমান, কথাকাটাকাটির পর স্বামীস্ত্রী ও সন্তানের চোখের জল বিনিময় ঘটে। তারপর সবকিছু সহজ হয়ে যায়। পুনরায় ঘর বাঁধার মমতা জাগ্রত হয়।
উভয়পক্ষের অভিভবকরাও চোখের জল বিনিময় করে দম্পতির নতুন মিলনকে মন থেকে মেনে নেন। অনুষ্ঠান স্থলেই নিয়মানুযায়ী তালাক অকার্যকর করে স্বামীস্ত্রী সন্তান একসাথে নতুন প্রত্যয়ে সংসার জীবনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান।
এ সময় সকলকে মিস্টি খাইয়ে আপ্যায়ন করেন আমীর খসরু।
লাকি খাতুন জানান, সংসার ভাঙ্গা হৃদয়ভাঙ্গার চেয়েও শতগুণ কষ্টের। আমীর খসরু সাবের জন্য তার ভাঙ্গা সংসার জোড়া লেগেছে। স্বামী, সন্তান নিয়ে বসবাসের পরম সুযোগ পেয়েছেন। এজন্য লাকি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ফারুখ অনুভূতি জানিয়ে বলেন, সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আবার ফিরিয়ে পেয়েছি। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।
এখন নতুন করে সব শুরু করতে চাই। আর অন্ধকার থেকে আলোয় আসার সুবুদ্ধ দিয়েছেন আমীর খসরু সাহেব। তাকে স্যালুট।
এ ব্যাপারে গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু জানান, মানুষ সুখের জন্য সংসার বাঁধে। সেখানে অনেক সময় কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।
এ বন্ধুর পথে কখনো-সখনো মানঅভিমান বা সাময়িক ভুলবোঝাবুঝির অবতারনা হতে পারে। কিন্তু সেটিকে অভারকাম করে সুখেদুখে মিলেমিশে থাকার নামই সংসার। সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনা খুবই কষ্টদায়ক।
সরকারি দায়িত্বের কিছুটা বাইরে গিয়ে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি তিনি করেছেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...