বিভিন্ন গনমাধ্যমে অন্ধ প্রতিবন্ধী মাসুদের সাবলম্বী হওয়ার গল্প প্রকাশ হওয়ার পর এবার সরকারি সহযোগীতার বার্তা নিয়ে পাশে দাড়ালো উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার সকালে দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসনের একটি দল উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে মাসুদের খামারটি পরিদর্শন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ, দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কবির, উপজেলা প্রকৌশলী খ. ম. ফরহাদ হোসাইন, পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটন।
খামার পরিদর্শনের পর প্রতিবন্ধী মাসুদের সাবলম্বী হওয়ার বাস্তব চিত্র দেখে দলটি মাসুদের প্রশংসা করেন। মাসুদ স্বাভাবিক মানুষের জন্য একটি দৃষ্টান্ত বলেও মনে করেন তারা। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসুদকে সরকারি সহযোগীতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মাসুদের খামার আমরা পরিদর্শন করে তার বাস্তব চিত্র দেখলাম। সরকারিভাবে তাকে যতোটুকু সহযোগীতা করা যায় তার চেষ্টা আমরা করবো।
এদিকে খামারে পাশেই রয়েছে কোমলমতি শিশুদের জন্য মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা সরকারি বা বেসরকারি সহযোগীতার মাধ্যমে মাসুদের খামারটি স্থানান্তরের জোর দাবি জানান।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে ১৯৮৪ সালে মাসুদের জন্ম। সামাদ মিয়া ও মাসুমা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে মাসুদ প্রথম। তিন বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে মাসুদের দু-চোখ অন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই সময়ে শেষ চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনি চোখের আলো। তার পর থেকেই অন্ধ।
অন্ধ বলে থেমে থাকেনি মাসুদ। ১৯৯৫ সালে ১১ বছর বয়সে তিনি টাঙ্গাইল জেলা শহরে বিবেকানন্দ স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লুইবেন হেলেন ক্লারের ব্রেইলি পদ্ধতিতে ১৯৯৯ সালে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে বাড়ি ফিরে আসার পর নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করে।
পরে ওই বছরই বাড়ির পাশে মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মুদি দোকান দেন। ২০০১ সালের শেষের দিকে টুঙ্গি প্রতিবন্ধি ইন্সটিটিউটে বাঁস বেতের কাজ শিখতে যায় মাসুদ। কিছুদিন কাজ শেখার পর বাড়ি এসে পূণরায় কর্ম জীবনে আটকে যায়।
এরপর থেকে জমা-জমির চাষ থেকে শুরু করে গরু পালন পর্যন্ত সব কাজে বাবাকে সাহায্য করতে থাকে। দু-জনের উপার্জনে ছোট তিন ভাই বোন রাসেল, সোহেল ও সালমাকে পড়া লেখা করায়।
প্রতিবন্ধী হিসেবে দাদা হামিদ মিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ১৩ শতাংশ জমির ওপর ২০১১ সালে তৈরি করে লেয়ার মুরগি খামার। মাসুদের খামারে প্রায় ২৩শ লেয়ার মুরগি রয়েছে। স্থানীয় বাজারের ডিমের চাহিদা পূরণ করছে মাসুদের খামার।
প্রথম পর্যায়ে খামারে লোকসান হলেও বর্তমানে তার মাসিক উপার্জন প্রায় দেড় লাখ টাকা। ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা কাজ করেও তার আত্মতৃপ্তি সে নিজে উপার্জন করছে। তার উপার্জনেই সংসার চলছে। এমনকি তার ভগ্নিপতি (সালমার স্বামী) মো. সেলিম মিয়া গত চার বছর আগে হৃদরোগে মার যাওয়ার পর থেকে সালমার সংসার খরচ বাবত মাসে ১০হাজার টাকা করে দিয়ে আসছে।
২০০৫ সালে রেখা আক্তারকে বিয়ে করার পর থেকে দাম্পত্য জীবন চলছে স্বাভাবিক। তার ঘরে জন্ম হয়েছে অর্পা নামের এক কণ্যা সন্তানের। অর্পার বয়স এখন ৯ বছর। মঙ্গলহোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে অর্পা।
মাসুদের বাবা সামাদ মিয়া ও মা মাসুমা বেগম বলেন, মাসুদকে কখনই তারা প্রতিবন্ধী মনে করে নি। এ অবস্থায় সরকারি লোকজন যে মাসুদের খামার পরিদর্শন করেছে এতে আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাসুদ কিছু পায় আর না পায় তাতে কিছু আসে যায় না। মাছুদের প্রতি সরকার যে সহানুভুতি দেখিয়েছে এতেই খুশি।
প্রতিবন্ধী মাসুদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনেকেই সমাজের বোঝা মনে করেন। কিন্তু সরকারি লোকজন আমার খামার পর্যন্ত এসেছে এতেই আমি খুশি।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে সমাজের বোঝা মনে না করে কর্মমূখী শিক্ষা গ্রহণ করে শ্রম ও মেধা খাটিয়ে নিজেকে সমাজের বোঝা থেকে সম্পদে পরিনত করা সম্ভব।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...