একদিন যে সন্তানের জন্য বাবা-মা ছিলেন স্নেহময়, যে সন্তান একটু আঘাত পেলেই বাবা হয়ে উঠতেন চিন্তিত। যে সন্তানকে নিজে হাত দিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন, কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন এবং কখনই নিজের অসুবিধার কথা সন্তানদের বুঝতে দেননি।
আজকাল সমাজে এমন কিছু সন্তান দেখা যায়, যারা কিনা মা-বাবার এতসব আদর-যতেœর কথা ভুলে মা-বাবা খোঁজ রাখেন না। এমনই এক অসহায় গর্ভধারিনী মা মজিরন বেওয়া।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ভরুয়া গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ আহম্মেদের গর্ভধারিনী মা তিনি। বর্তমানে অবহেলায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা ছেলে তার বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ নেয় না।
জানা যায়, উপজেলার ভরুয়া গ্রামের মৃত হযরত আলী সরকারের স্ত্রী মজিরন বেওয়া ৫ সন্তানের জননী। পাঁচজনের তিনজন মারা গেছে। জীবিত রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মজিদ ও মজনু মিয়া। মজনু চাকরীর সুবাদে ঢাকায় থাকেন। ছোটখাটো একটা চাকুরী করে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। আর আব্দুল মজিদ আহম্মেদ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বছরখানেক আগে অবসরে গেছেন। কিন্তু তার মায়ের খোঁজ নেয় না। পাঁচ বছর আগে ঘর থেকে বের হতেই মেঝেতে পড়ে তার কোমর ভেঙে যায়। সে থেকে তিনি আর উঠে দাড়াতে পারেন না।
সরেজমিনে ভরুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙা-চোরা একটি জরাজীর্ণ ঘরে একশ ছয় বছর বয়সী মজিরন বেওয়া শুয়ে আছে। এসময় কথা হয় তার সাথে।
কতজন ছেলে-মেয়ে জানতেই বলেন, আমার তিন ছেলে আগেই মারা গেছে। দুই ছেলে জীবিত থাকতেও আমার কাছে মরে গেছে। ছেলে আমার মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশে চাকরীও করতো। কিন্তু দশটি বছর হয়ে গেল আমার কোন খোঁজ নেয়নি।
কোরবানী ঈদের সময় লাখ টাকার গরু কোরবানী দিয়েছিল শুনেছিলাম। কোরবানীর মাংস এনে খাওয়াবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু একটুকরা কোরবানীর মাংসও কপালে জুটেনি।
বৃদ্ধ এই মায়ের বয়স এখন ১০৬ বছর। বয়সের ভারে তিনি এখন চোখে এবং কানে কম শুনেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দেশ মায়ের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আজ সেই মুক্তিযোদ্ধার মা এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকবে সেটা কল্পনা করা যায় না।
ভরুয়া গ্রামের আকরাম আলী, মতিয়ার রহমান আবুল কালাম ও ধলু সামাদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ তার গর্ভধারিনী মাকে দশ বছর হলো খোঁজ নেয় না। এলাকার দুষ্ট লোকদের নিয়ে তার বাড়িতে মাদক সেবন করে আর আনন্দ ফূর্তি করে। তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে চায় না।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...