টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালের লাইসেন্স না থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। ভুল চিকিৎসায় অনেকের জীবন সংকটাপন্ন হয়েছে। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু সামা’র বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নেয়ারও অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন অজানা কারনে নিরব ভ‚মিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে স্থাপন করা হয়েছে নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটাল। হসপিটাল অনুমোদনের নির্ধারিত শর্তাবলীর অন্যতম ৩ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারী নার্স এবং প্যাথলজিষ্ট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ডাঃ শারমিন রহমান, ডাঃ জান্নাত আরা ইসলাম এবং ডাঃ আদীব ইবনে জাহিদকে ক্লিনিকের আবাসিক ডাক্তার হিসেবে উলেখ করা হলেও তারা কেউই এখানে থাকেন না। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় অপারেশন থিয়েটার, ল্যাবরেটরী ও সরঞ্জামাদিও নেই। সেইসাথে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্নতা। নামমাত্র নার্স ও মেডিকেল এসিস্ট্যান্ড দিয়েই চলছে সমস্ত কার্যক্রম।
কিছুদিন পূর্বে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাহবুব হোসেন অমিত নামের গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী পেটে ব্যাথ্যা নিয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু ভর্তি থাকা অবস্থায়ই ডা. আবু সামা তার মালিকানাধীন নিউ আল-রাজী ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে ওই রোগীকে পাঠিয়ে দেন। এরপর নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন করেন। এরকম অভিযোগ অহরহ।
এদিকে কালিহাতী উপজেলার নরদহির মজনু মিয়ার স্ত্রী রওশন আরার ভুল অপারেশন করার অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে মজনু মিয়া ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেছেন। এতে তিনি উলেখ করেছেন নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে তার স্ত্রীর ডেলিভারি অপারেশন সিজার করা হয়। অপারেশনে পেটের ভেতরে গজ কাপড় এবং মলদ্বার ছিদ্র হওয়ায় রওশন আরা মারাত্মকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। ইতোপূর্বেও একাধিক ভুল চিৎিসার রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়েছে ।
মজনু মিয়া বলেন ভুল সিজারের কারণে আমার স্ত্রী প্রায় ২ মাস মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চিকিৎসা করে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি এসপি স্যারের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করায় ডাঃ আবু সামা আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন মোলা বলেন, আমি শুনেছি নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে ভুল চিকিৎসা হয়। ডাঃ আবু সামা একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হয়েও কিভাবে লাইসেন্স ও নিয়মনীতি বিহীন ক্লিনিক চালান। চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে এধরনের প্রতারণার জন্য সিভিল সার্জনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ভুক্তভোগিরা বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম স্বাস্থসেবা। স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি হয়েও ডাঃ আবু সামার অনৈতিক কাজ ও নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে চিকিৎসার নামে গলাকাটা দামে প্রতারণা বন্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যক্তি বলেছেন ডাঃ আবু সামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সিভিল সার্জনের সাথে তার ভাল সম্পর্ক। তাই এই প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে চিকিৎসার নামে করছেন প্রতারণা ও ব্যবসা। এটার একটা বিহিত হওয়া দরকার। এছাড়া ভূঞাপুরের একাধিক ক্লিনিক থেকে আবু সামা নিয়মিত কমিশন গ্রহণ করেন বলেও জানা গেছে।
এসব বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. আবু সামা বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা। নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটাল যথাযথ নিয়ননীতিই মেনেই চালানো হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরিফ হোসেন খান বলেন, নিউ আল-রাজি ক্লিনিক এন্ড হসপিটালের এবং ডাঃ আবু সামার এসব বিষয়ে আমি তেমনটা অবগত নই। খবর নিয়ে দেখতে হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...