টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত শর্তসাপেক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন দিয়েছেন। বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে তিনি টাঙ্গাইল কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শহরের কলেজপাড়ার বাসায় ফিরেছেন।
বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলের জেল সুপার মোখলেসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, উচ্চ আদালতের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র বুধবার টাঙ্গাইল কারাগারে পৌঁছালে সকল নিয়ম মেনে দুপুরে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরআগে গত সোমবার হাইকোর্টের ৯ নম্বর আদালতের বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ফারুক হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
সাবেক মেয়র মুক্তির আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আব্দুল মুনতাকিম জানান, বিচারকদ্বয় টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তথ্যগোপণ করে জামিন আবেদন করায় সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে তথ্য গোপন করে জামিন আবেদন করায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত এপ্রিলে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে জামিন চেয়ে আবেদন দাখিল করেন। এই আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত জুন মাসে জামিন চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন। জামিন চেয়ে আগে করা আবেদনের তথ্য দ্বিতীয় দফায় করা আবেদনে উল্লেখ না করায় আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে। তার ভাই আমানুর রহমান খান ওরফে রানা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
এর আগে দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর রহমান খান মুক্তি আদালতে আত্মসমর্পন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারী সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে অন্তবর্তী জামিন পেয়েছিলেন। মাঝে গত বছর অন্তবর্তী জামিন পেয়ে ১৮ দিন কারাগারের বাইরে ছিলেন। পরে মামলার বাদি অন্তবর্তী জামিনের মেয়াদ বর্ধিত না করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। শুনানী শেষে আদালত গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই জামিন বাতিলের আদেশ দেন। জামিন বাতিল হওয়ায় সহিদুর রহমান খান মুক্তি আবার কারাগারে যান।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজ পাড়া বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই জনকে গ্রেপ্তার করে। আদালত এই দুই জনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যা সঙ্গে তৎকালীন টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা ও বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যান।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে আমানুর রহমান খান রানা ও অপর তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে স্বাক্ষী গ্রহণ চলছে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...