০৬:১৮ পিএম | টাঙ্গাইল, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

হানাদারের নির্যাতন নিপীড়নের বর্ণণা দিলেন প্রাণে বেঁচে ফেরা আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম

স্টাফ রিপোর্টার | টাঙ্গাইল২৪.কম | শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | |
, টাঙ্গাইল :

১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি আর যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন হচ্ছে এ জেলায়। স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও দেহ আর মনে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন এ জেলার অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। এমন স্মৃতি লালন পালন করাসহ হানাদারদের নির্দয় নির্যাতন আর নিপীড়নের বর্ণণা দিলেন তিন দফায় মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা কাদেরিয়া বাহিনীর যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম।
 
টাঙ্গাইল করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাবে নেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের পরপরই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন তারা। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে জেলার অসংখ্য স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। 

এরই ধারাবাহিকতায় ৭১’এর ১৭ আগস্ট রাতে তিনি দ্বায়িত্বপান টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারটিয়া ভাতকুড়া এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধ্বংসের কাজ। এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন তিনি ও নজরুল ইসলাম বাকু নামের আরেক সহযোদ্ধা। তবে বৃষ্টির কারণে ওই বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধংসে ব্যর্থ হন তারা। রাতে ওই গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। তাদের আশ্রয় নেয়া বাড়িটি ছিল রাজাকারের। ভোরে তারা বাইরে এলে স্থানীয় মোতালেব ড্রাইভার, রশিদ ভেন্ডার ও ঠান্ড বা মন্টু নামের আরো একজন তাদের পিছু নেয় ও পথরোধ করেন। তখন তাদের অবস্থান ছিল তারটিয়া ভাতকুড়া এলাকার ঢাকা রোডে। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা দেখে তিন দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলেছেন পাকিস্থান আর্মি, পুলিশ আর রাজাকাররা অবস্থান ছিল নগরজলফৈ ব্রিজ, ভাতকুড়া ব্রিজ আর করটিয়ায় ওই বাহিনীর অবস্থান ছিল। 

এরপরও টাঙ্গাইল থেকে ফোর্স আনা হয় টাঙ্গাইল থেকেও। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক থেকে দেড়শ। এ সময় তাদের উপর বৃষ্টির মত গুলি ছুড়তে থাকেন ফিরে ফেলা বাহিনী। এরপরও তারা বিচলিত না হয়ে গ্রেনেড আর গুলি ছুড়ে অবস্থান ত্যাগের চেষ্টা চালান। তবে এরই মধ্যে পাকবাহিনীর ছোড়া একটি গুলির স্পিন্টার তার চোখের নিচে আর একটি গুলি লাগে পায়ে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই দেখেন পাকবাহিনীর সদস্যরা তাকে ঘিরে ফেলেছে। এ অবস্থাতেও তারা তার উপর চালাতে শুরু করে রাইফেলের বাড়ি আর বুটের লাথি। ওই স্থানের খালের উপর পরে থাকা গুলিবিদ্ধ সহযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাকুর কাছে নিয়ে যায় তাকে। এরপরও থানাপাড়ার ইকবাল নামের এক রাজাকার গুলিবিদ্ধ বাকুর উপর নয়টি গুলি চালায় ও তার বুকে রাইফেল তাক করে। 
 
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কারণে অনেকেই তাকে চিনতেন। এ সময় রাজাকার সদস্যদের করটিয়ার সা’দত কলেজে পড়ুয়া এক ছাত্র ওইস্থানে থাকা পাকিস্থান আর্মির একজন ক্যাপ্টেনকে বললো ওর কাছ থেকে তথ্য বের করা যাবে, তাই ওকে এখনই মারার দরকার নেই। এ কারণে ওখানে আমাকে না মেরে আনা হলো সার্টিক হাউসে এরপর থানায়। আটক থাকা দুইদিনে আমার উপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। 

এরপর ১৯ আগস্ট ভোর বেলায় দ্বিতীয় দফায় আবার আমাকে মেরে ফেলার জন্য নেয়া হয় বদ্ধভূমিতে। তবে এ সময় সার্কিট হাউসে উপস্থিত হন বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও সিএনএন এর সাংবাদিকরা। এ কারণে তাকে বদ্ধভূমি থেকে সার্কিট হাউসে ফেরত নেয়ার আদেশ দেন পাকিস্থান আর্মির একজন কর্নেল। সার্কিট হাউসে উপস্থিত ওই সাংবাদিকরা আমাকে অস্ত্রসহ আটকের তথ্য সংগ্রহ করাসহ আমার ভিডিও ধারণ করেন। এর ফলে দ্বিতীয় বার বেঁচে যাই আমি। তবে এরপরও আমাকে ছেড়ে না দিয়ে নেয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। সেখানেও চলতে থাকে ধারাবাহিক নির্যাতন। মাঝপথে নেয়া হলো ক্যান্টনমেন্টের সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে। যেখান থেকে কেউ কখনও জীবিত ফেরেনি। ক্যান্টনমেন্টের সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে আমাকে ইন্ডিয়ার চর বানানোর চেষ্টা চালায় পাকিস্থানী আর্মিরা। তারা আমাকে ভারতীয় সেনা সাজিয়ে পাকিস্থানী আর্মির সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়েছি এমনটা সাজানোর চেষ্টায় জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে শুরু করেন। 

এই জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে তারা একটি পেপারে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তবে ইতোপূর্বে আমি ইন্টারগেশন করায় ওই পেপারে স্বাক্ষর দেয় নাই। এ কারণে তারা আমাকে নিচ দিকে ঝুলিয়ে আমার দুই পায়ের পাতা দিয়ে গরম লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতন শুরু করে। এ নির্যাতন চলাকালে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় কিছু স্মরণে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আবার আমাকে আনা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট সেলে। এ সময় ক্যান্টনমেন্ট সেলে আটক বন্দিরা তাকে জানায় সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে গিয়ে কেউ আর জীবিত ফিরে আসে না। তবে সেখান থেকে আমি আর আরেকটি যুবক জীবিত ফিরে আসি।

পাকিস্থানী আর্মির সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিট সম্পর্কে তিনি বলেন, দশ বার ফিট প্রসস্থের ওই ঘরে বৈদ্যুতিক চুলাসহ ছিল নির্যাতন চালানোর সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি।

ইন্টারগেশন ইউনিট থেকে আবার নেয়া হয় রেডিও পাকিস্থান ঢাকা সেন্টারে। সেখানে নেয়া হয় আমার সাক্ষাৎকার। সেখানে রিজিওনাল ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের একজন বাঙালী। তিনি আমাকে বুদ্ধি দিলেন ও বললেন আমার কাছে খবর আছে এখান থেকে নিয়ে তারা আপনাকে মেরে ফেলবে। এ কারণে তারা জিজ্ঞাসা করলে আপনী তাদের বলবেন, কাদের সিদ্দিকী আমাকে জোড়পূর্বক ওই বাহিনীতে আটকে রেখেছে। তাহলে কপাল ভালো থাকলে আপনী বাঁচতে পারেন। তার পরামর্শ মতই আমি তাদের বলেছি আমি ইচ্ছাকৃত মুক্তিযুদ্ধে যাইনি, কাদের সিদ্দিকী আমাকে জোড়পূর্বক বাহিনীতে নিয়েছেন এই মিথ্যাটুক বলেছিলাম। এ কারণে তারা আমাকে না মেরে কয়েকদিন সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেন। তবে আমার সাথে থাকা একজন কৃষক আর এক ছাত্রের সাজা হয় মৃত্যুদন্ড। তাই তার ধারণা ছিল যারা মুক্তিযোদ্ধা না তাদের সাজাই যখন হয়েছে মৃত্যুদন্ড। সেখানে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা আমি, আমার সাজা তো নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড। কিন্তু আমার সাজা হয় ১৪ বছরের জেল আর ১৫টা বেতের বাড়ি।

তবে তার ধারণা বিদেশী বিভিন্ন মিডিয়ায় তার সংবাদ প্রচার পাওয়ায় তার সাজা মৃত্যুদন্ড হয়নি।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। এরপর ১০ জানুয়ারি ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু আর ২৪ জানুয়ারি বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দেন দেশের প্রথম জেলা টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধারা।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মারধরের হু সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত এসআই : গ্রেফতার ১৬ মির্জাপুরে গরীব ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ এক পরিবারের ৪জন আহ মির্জাপুরের বাঁশতৈলে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস ধনবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত চলন্ত ট্রেনের ছা‌দ থে‌কে যাত্রীর মর‌দেহ উদ্ধার নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি