টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে নৌকা তৈরি আর বেঁচাকেনার ধুম পড়েছে। এছাড়াও চলছে পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ। এ নিয়ে নৌকা তৈরীর কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা বিক্রি করে ফিরে আসছে কারিগরদের পরিবারের স্বচ্ছলতা।
নদীতীরবর্তী গ্রামবাসির তথ্যে জানা যায়, এ গ্রামগুলোতে নৌকার ব্যবহার হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। চলছে বর্ষা কাল, চারিদিকে বন্যার ভয়াল থাবা। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যার এ সময় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। এ কারণে পানিবান্দি মানুষের মাঝে বেড়েছে নৌকার চাহিদা। চরাঞ্চলের বাসিন্দারা নৌকার মাধ্যমে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজারে যাতায়াত করছে। এছাড়াও বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নৌকা দিয়ে রাত দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ উপজেলার হুগড়া,কাকুয়া,কাতুলী,ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত এলাকার জেলেরা। বন্যার পরপরই আবার শুরু হবে নৌকা বাইচ।
সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের তোরাপগঞ্জ ও কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর এলাকার নৌকা তৈরীর কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটায় ব্যস্ত। কেউ হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় প্যাড়েক বা গজাল লাগাতে আবার কেউ কেউ ব্যস্ত তৈরি নৌকা বিক্রির কাজে। সবমিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরীর এই কারিগররা।
ওমরপুর এলাকার নৌকা তৈরি কারিগর আ.সামাদ বলেন, সারা বছর নৌকার চাহিদা না থাকলেও বর্ষাকালে বাড়ে চাহিদা। এ কারণে বছরের এ সময়টাতে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। এবার আগাম বন্যা হওয়ায় নৌকার চাহিদা আরো বেড়ে গেছে। তার তৈরী নৌকা বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ক্রেতারা এখানে এসে তাদের পছন্দসই নৌকা কিনে নিচ্ছেন।
ষাটর্দ্ধো কারিগর মজিদ মিয়া বলেন,এটি তার বংশগত পেশা। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এ পেশায় লিপ্ত রয়েছেন। বছরের বর্ষা মৌসুমে নৌকা নির্মান করেই চলে তার সংসার। করোনায় তাদের জীবনযাপন অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। এরপরও চলতি বর্ষা মৌসুমকে ঘিড়ে রয়েছে তাদের স্বাভাবিক সংসার জীবন ফিরে আসার স্বপ্ন। এ কাজ করে দৈনিক গড়ে তাদের হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নৌকা ক্রেতা মো.লাল মিয়া বলেন, আমার বাড়ীর চারপাশে পানি। আমার বাজার ঘাট থেকে শুরু করে সবসময় প্রয়োজন হচ্ছে নৌকা। বাড়ির ছোট বড় সকলের যাতায়াতের জন্য এখানে নৌকা কিনতে এসেছি। দর দাম করে দেখছি। বাজেট অনুপাতেই নৌকা কিনবেন বলে জানান তিনি।
কাতুলীর ক্রেতা হারেজ আলী বলেন, গ্রামের প্রতিটি মানুষ এখন পানিবন্দি। পরিবারের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে হাট বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামের মানুষের পারাপারের জন্য একটি নৌকা কিনতে এসেছি। চার হাজার টাকায় মাঝারী সাইজের এই নৌকাটি কিনলাম। বাড়ির মানুষের পারাপারের সুবিধা হওয়াসহ মানুষ পারাপার করে কিছু টাকা উপার্জন করা যাবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌকা নির্মাণ ও ব্যবহার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের তোরাপগঞ্জ ও কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নৌকা তৈরীর কারখানা। তবে করোনাকালীন সময়ে নৌকা নির্মাণের সংশ্লিষ্ট শ্রমিক আর মালিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে নৌকার বেচা কেনা বেশি হলে কিছুটা স্বাভাবিক হবে তাদের জীবন যাত্রা। এ বাহনকে ধরে রাখতে আর এর নির্মাণ শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এরই মধ্য দিয়ে নৌকা নির্মাণ শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা করোনাকালীন সময়ে এ নির্মাণ শ্রমিকদের সরকারী সহায়তা দিয়েছি। এরপরও তাদের কর্মজীবনে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। আবারও তাদের সরকারী সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...