নাগরপুরে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন পাষন্ড স্বামী। অগ্নিদগ্ধ স্ত্রী নদীতে লাফিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করলেও শরীরের ৬০ভাগই পুড়ে গেছে। সে বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
গত শুক্রবার (২৬ জুন) রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নাগরপুর উপজেলা ভাররা ইউনিয়নের শাহজানী গ্রামে। অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সুমি আক্তার (২০)উপজেলা ভাররা ইউনিয়নের শাহজানী গ্রামের আব্দুল হালিমের মেয়ে।
সুমি আক্তারের চাচা সোহেল মিয়া জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক করে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চরজাজিরা গ্রামের শাহজাহান সরকারের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে বিয়ে হয় নাগরপুর উপজেলার ভাররা ইউনিয়নের শাহজানী গ্রামের আব্দুল হালিমের মেয়ে সুমি আক্তারের। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মামুন সম্প্রতি নৌ বাহিনীর চাকুরী হারায়। মামুন বেকার হয়ে পড়ায় গাড়ি কেনার জন্য সুমির পরিবারকে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়।
এ কারণে গত কয়েক মাস আগে সুমি তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। গত ২৬ জুন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মামুন সুমিকে ফোন করে বলে তার মা অসুস্থ। তাই বাড়িতে আসতে হবে। সুমির পরিবার থেকে বলে সকালে যাওয়ার জন্য। তবে রাত ১২টার দিকেই মামুন সুমিদের বাড়ি পৌঁছায়। সে তাৎক্ষণিক সুমিকে নিয়ে বের হয়। পথিমধ্যে বোতল থেকে সুমির গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় স্বামী মামুন। এ সময় সারা শরীরের আগুন নিয়ে সুমি চিৎকার করে পাশের নদীতে লাফিয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অগ্নিদগ্ধ সুমি বলেন, রাতে নৌকায় বাড়ির পাশে থাকা বিল পাড়ি হয়ে আব্দুল্লাহপুর নামক গ্রামে নামি। এ সময় আমার স্বামী মামুন পথে প্রসাব করা জন্য বসেন আর পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ স্বামী দাঁড়িয়ে পিছন থেকে আমার শরীরে কেরোসিন ছুড়ে মেরে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুন থেকে বাঁচতে আমি চিৎকার করে পাশের নদীতে ঝাঁপ দিই। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন ও আমার বাড়িতে খবর দেন।
অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু সুমির মা সুফিয়া বেগম বলেন, সম্প্রতি নৌ বাহিনীর চাকুরী হারিয়ে বেকার হয় মেয়ের জামাই মামুন। এরপর থেকেই গাড়ি কেনার জন্য সুমির পরিবারকে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এত টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে মামুন। এ কারণে আমার মেয়ে সুমি আমাদের বাড়িতে চলে আসে। হঠাৎ গত ২৬ জুন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মামুন সুমিকে ফোন দিয়ে বলে তার মা অসুস্থ। তাই বাড়িতে আসতে হবে। আমরা সকালে যাওয়ার জন্য বললেও রাত ১২টার দিকে মামুন বাড়ি পৌছায়। এরপর সে তাৎক্ষণিক সুমিকে নিয়ে বের হয়। পথিমধ্যে সুমির গায়ে বোতল আনা কেরোসিন ঢেলে ও আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সারা শরীরের আগুন নিয়ে সুমি চিৎকার করে পাশের নদীতে ঝাঁপ দেয় সুমি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সত্যতা নিশ্চিত করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা.মো. শফিকুল ইসলাম সজীব বলেন, অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধু বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধুর পরিবার থেকে এখনও থানায় কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...