০৪:৪৮ পিএম | টাঙ্গাইল, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

মওলানা ভাসানী, মজলুম মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

রেজাউল করিম | টাঙ্গাইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬ | | ৩০২
, টাঙ্গাইল :

১৭ নভেম্বর। ১৯৭৬ সালের এ দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আুবদুল হামিদ খান ভাসানী পরলোক গমন করেন। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। মজলুম মানুষেরা চিরতরে হারায় তাদের পক্ষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ।

আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন ধর্মীয় নেতা, ছিলেন সার্বজনীন রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তি। তাঁর জীবন ছিল একদম সাদাসিধে। তাঁর নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল কৃষক শ্রমিক জনসাধারণ, যাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তবে ক্ষমতার প্রতি তাঁর কোন মোহ ছিল না।

পরিচয় ও কর্ম জীবন

ভাসানী ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন হাজী শরাফত আলী খান। স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় কয়েক বছর অধ্যয়ন ছাড়া তার বিশেষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন টাঙ্গাইলের কাগমারিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এলাকার কালা গ্রামে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।

যেভাবে মওলানা হামিদ খান হলেন ভাসানী

১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। পরে তিনি টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে গিয়ে তখনকার অত্যাচারিত কৃষকদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

ত্রিশের দশকের শেষ দিকে তিনি আসামে বসবাসকারী বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঐ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাসানচরে বন্যার কবল থেকে বাঙালি কৃষকদের রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। ভাসানচরের জনসাধারণ তাকে ‘ভাসানী সাহেব’ বলে অভিহিত করে এবং পরবর্তীতে এই উপাধি তাঁর নামের অবিচ্ছিন্ন অংশে পরিণত হয়।

আন্দোলন আর কারাগারে রাজনৈতিক জীবন

১৯৩৭ সালে ভাসানী মুসলিম লীগে যোগদান করে আসাম শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এই ভৌগোলিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আসামের মুখ্যমন্ত্রী স্যার মোহাম্মদ সাদউল্লাহ্র সঙ্গে মওলানা ভাসানীর সংঘর্ষ বাঁধে।

ভারত বিভাগের সময় ভাসানী আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আসাম সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে আসাম ছাড়ার শর্তে তাকে মুক্তি দেয়।

১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে ভাসানী পূর্ব বাংলায় আসেন, তবে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতৃত্ব থেকে তাকে দূরে রাখা হয়। তিনি দক্ষিণ টাঙ্গাইল এলাকার উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী এবং করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন।

একটি অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন এবং সকল প্রার্থীকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করেন। ১৯৪৯ সালে পন্নীর ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ভাসানীর ওপর থেকেই যায়।

১৯৪৯ সালে ভাসানী পুনরায় আসাম যান। সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ধুবড়ি জেলে যান। মুক্তি পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন।

মুসলিম লীগের ক্ষুব্ধ সদস্যরা ঢাকায় ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন এক কর্মী সম্মেলনের ডাক দেন। প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি যোগদান করেন সম্মেলনে। ২৪ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের নতুন রাজনৈতিক দলের সভাপতি হন মওলানা ভাসানী এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক হন সাধারণ সম্পাদক।

জন্মদিনে নতুন দলটি ঢাকার আরমানিটোলায় ভাসানীর সভাপতিত্বে একটি জনসভার আয়োজন করে। এখানেও ভাসানীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুক্তির পর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র নিহতের প্রতিবাদ করায় ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পুণরায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে এবং মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৭টি আসন। ১৯৫৪ সালের মে দিবসে তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দুটি বৃহৎ শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

ঐ বছরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সভাপতি হন। ১৯৫৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন।

সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হন এবং আতাউর রহমান খানকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দীর বৈদেশিক নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন।

এই মতবিরোধের কারণে দলে ভাঙন ভাঙন শুরু হয়। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। তিনি এই দলেরও সভাপতি হন এবং এর সেক্রেটারি জেনারেল হন পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানী।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করলে মওলানাকে আবার আটক করা হয়। ১৯৬৩ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মওলানা চীন ভ্রমণে যান এবং ১৯৬৪ সালে হাভানায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৭ সালে বিশ্ব সমাজতন্ত্র সোভিয়েতপন্থী ও চীনপন্থী এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপও ভাগ হয় এবং মওলানা চীনপ্রন্থী দলের নেতৃত্বে থাকেন।

তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে মুক্তির জন্য চাপ দিতে থাকেন। রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য ইয়াাহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। মওলানা নির্বাচন বয়কট করে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মওলানা ভাসানী ভারতের দিল্লিতে আটক হন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মওলানা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন।

১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ছয়টি দল নিয়ে মওলানার নেতৃত্বে একটি যুক্তফন্ট গঠন করা হয়। ৩০ জুন মওলানাকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করা হয়।

মওলানা ভাসানী ফারাক্কা চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে এক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি খোদায়ী খিদমতগার নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সন্তোষে ইসলামী বিশববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

তিনি সন্তোষে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মেয়েদের একটি স্কুল এবং একটি শিশু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি পাঁচবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ এবং কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

আসামে তিনি ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সন্তোষে সমাহিত করা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মারধরের হু সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত এসআই : গ্রেফতার ১৬ মির্জাপুরে গরীব ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ এক পরিবারের ৪জন আহ মির্জাপুরের বাঁশতৈলে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস ধনবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত চলন্ত ট্রেনের ছা‌দ থে‌কে যাত্রীর মর‌দেহ উদ্ধার নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি