সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা। প্রতিমার কাঠামোর মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে দেবী দুর্গাকে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলার কাজ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে জেলা ও উপজেলা হিন্দুপাড়া গুলোতে আগাম শারদীয় উৎসবের আমেজ লক্ষনীয়। উচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্র করে মহা-সম্মেলন হয় বলে এ পূজাকে বলা হয় সার্বজনীন পূজা। আর শরৎকালে হয় বলে বলা হয় শারদীয় উৎসব।
দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে জেলায় এবছর ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২শ’ ১৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০৯ টি, ধনবাড়ী উপজেলায় ২৯ টি, মধুপুর উপজেলায় ৫২ টি, ভূঞাপুর উপজেলায় ৩৮ টি, গোপালপুর উপজেলায় ৫১ টি, ঘাটাইল উপজেলায় ৭৮ টি, কালিহাতী উপজেলায় ১৮০ টি, দেলদুয়ার উপজেলায় ১২৪ টি, নাগরপুর উপজেলায় ১২৫ টি, মির্জাপুর উপজেলায় ২৩৩ টি, বাসাইল উপজেলায় ৫১ টি ও সখীপুর উপজেলায় ৪৪ টি পূজা মন্ডব রয়েছে।
জেলায় উল্লেখযোগ্য মন্ডপগুলো হচ্ছে, বড়কালীবাড়ী, আদালতপাড়া, করটিয়া, বাজিতপুর, পাথরাইল, করাতিপাড়া, চ-ি সহ বেশ কয়েকটি। অন্যদিকে, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য প্রতিটি মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়োন থাকবে।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, তৈরি করা হচ্ছে দূর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেচা, হাঁস, সর্পসহ প্রায় ১২ টি প্রতিমা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গতিনাশীনী দুর্গাদেবীকে বরণ করে নিতে মন্ডপে প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। ঢাক, ঢোল বাদ্যকাররা বাদ্যযন্ত্র ঠিকঠাক করে নিচ্ছে। সেইসাথে ব্যস্ত প্রতিমা কারিগররাও।
মূর্তি গড়া শেষে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে প্রতিমা। দেবীকে স্বাগত জানাতে সর্বত্র আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আবালবৃদ্ধ বনিতা নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ এ সর্ব বৃহৎ শারদীয় উৎসবকে স্বার্থক করতে প্রহর গুনছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি পূজা মন্ডপে।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সূত্রে জানা যায়, ০৬ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ০৭ অক্টোবর মহানবমী অনুষ্ঠিত হবে। ০৮ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এ দুর্গাপূজা শেষ হবে।
এ ব্যাপারে কথা হয় পরিমল পালের সাথে। তিনি বলেন, এবার আমি ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। এতে আমার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৩ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। এতে আমি লাভবান হবো।
তারটিয়া পালপাড়ার পরিতোষ পাল বলেন, এটা আমাদের পৈত্রিক ব্যবসা। তাই এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আমরা কাজ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার ঝন্টু বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ এবং আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি আমাদের লোকজনও কাজ করবেন।
প্রতি বছরের মত এবারো সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করছি অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও পূজা সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করবে। অপরদিকে মোবাইল টিম, সাদা পোশাকে পুলিশও কাজ করবে। আশা করছি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...