বছর ঘুরতে আবার দুর্গতি নাশিনী দশভুজা দেবী দুর্গা আসছেন আমাদের মাঝে। শারদীয় দুর্গাপূজা হলেও এবার শরৎ কালে আসছেন মা। এতে অপেক্ষার প্রহর বেড়েছে। কিন্তু তাতে কি মার আগমনে আনন্দ তো আজ প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে।
আসছে ৩০ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দেবীর আগমনের ঢামাঢোল। এবার দেবী দুর্গার ঘোটকে হবে আগমন। আবার ফিরেও যাবেন ঘোটকে।
দেবীর আগমনে প্রতিমা শিল্পীরা এখন প্রতিমার গায়ের শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত। ব্যস্ত মায়ের ভক্তরা। ঘর-দুয়ার পরিস্কার আর নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সবাই।
আগামী ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ছয় দিনের শারদীয় দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ৭ অক্টোবর শুক্রবার দেবীর মহা-ষষ্ঠী পূজা ও দেবীর আমন্ত্রণ অধিবাস। ৮ অক্টোবর শনিবার দেবীর মহাসপ্তমী, ৯ অক্টোবর রোববার মহাষ্টমী, ১০ অক্টোবর সোমবার মহানবমী, ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
টাঙ্গাইল শহরের শ্রী শ্রী কালীবাড়ি, আদালতপাড়া, রেজিস্ট্রিপাড়া, সাবালিয়া, কলেজপাড়া, থানাপাড়া, প্যারাডাইস পাড়া, করটিয়া, পাথরাইলসহ বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের ব্যাপক ব্যস্ততা।
দেবী দুর্গাকে স্বাগতম জানাতে সব জায়গায় চলছে সাজ সাজ রব। মন্ডপে মন্ডপে চলছে দেবী দুর্গাকে সাজাতে অষ্টপ্রহর প্রাণান্তকর চেষ্টা। প্রতিমা শিল্পীদের হাতের যাদুতে মহালয়ার আগেই যেন প্রাণ পেয়েছে দেবী দুর্গা। আর তাতেই বোঝা গেল এবারও কাঠাম নির্মাণের মাঝে শেষ তুলির ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত।
তারুটিয়া ভাতকুড়ার এলাকার প্রতিমা কারিগর মহাদেব পাল বলেন, এবছর আমি ও আমার দুই ছেলে মিলে মোট প্রায় ৩০টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এ কাজ করছি। আমার তিন ছেলেকেই কাজ শিখিয়েছি। দুই জনই প্রতিমা তৈরির এই কাজ করে। আমি বিগত ৩১ বছর যাবৎ টাঙ্গাইল পৌর এলাকার রেজিস্ট্রিপাড়ার দুর্গা প্রতিমা তৈরির করি। এবছরও করছি। তবে প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আদালতপাড়া পূজা সংসদের প্রতিমা শিল্পী দুলাল পাল বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই কাজ করছি। আমি আমার বাবার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। আমার বাবা শিখেছে আমার দাদুর কাছে। বর্তমানে আমি আমার ছেলেদের নিয়ে কাজ করছি। ওরাও কাজ শিখছে। এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ও পারিবারিক ব্যবসা। এ বছর আমি মধুপুর, ঘাটাইল, পাথরাইল, আদালতপাড়া, সাবালিয়া, কান্দা পাড়াসহ মোট ১১টি প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছি। এদের মধ্যে আদালতপাড়া পূজা সংসদের প্রতিমার মূল্য সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা।
আদালতপাড়া পূজা সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা লিটন বলেন, গত এক মাস ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কাজ প্রায় শেষ দিকে। সাতদিন যাবৎ ডেকোরেশনের কাজ চলছে। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আদালত পাড়া পূজা সংসদের সকল সদস্য দিনরাত পরিশ্রম করছে। এলাকার প্রতিটি মানুষ এই দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। তিনি দুর্গা পূজাকে ঘিরে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন।
টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। রাষ্ট্র সবার, উৎসব সবার। সরকার দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। ইতিপূর্বে শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘেœ উদযাপন হয়েছে। তিনি আশা করেন এবারও শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলায় এবার মোট ১০৫০টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার দাস বলেন, বর্তমানে সারা দেশে উদীয়মান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, পুরোহিত হত্যা যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠার পাঁয়তারা করছিল, সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশাসনের নজরদারির বাইরে কেউ নেই, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্গাপূজায় শতভাগ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...