টাঙ্গাইলের গোপালপুরে দিবালোকে নিজ দোকানের সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার হত্যাকান্ডের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও খোলেনি হত্যার রহস্য। হত্যা মামলা তদন্তের অগ্রগতি না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছেড়েছে নিখিলের স্ত্রীসহ তাঁর ভাইদের পরিবার।
মঙ্গলবার সরজমিনে নিখিলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিখিলের বিশাল বাড়িটি মানুষশুণ্য। তালা ঝুলছে নিখিলের ঘরসহ তাঁর ভাই প্রয়াত অখিল জোয়ারদার, প্রয়াত ভোলানাথ জোয়াদার ও একমাত্র বেঁচে থাকা ভাই গোপাল জোয়াদারের ঘরের দরজায়।
নিহত নিখিলের স্ত্রী আরতি জোয়ারদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ’দুই তিন জন পুলিশ পাহারায় মনে আতঙ্ক নিয়ে কয়দিন আর থাকা যায়। ভয়ে বাড়িতে কেউ থাকতে সাহস না পাওয়ায় পরিবারের সবাই কেউ আত্মীয় বাড়ি, কেউ দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছে। যে কারনে আমিও বাবার বাড়ি ভাইদের কাছে চলে এসেছি।’
এ বিষয়ে গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল জলিল জানান, আতঙ্কের কোন কারণ নেই। দর্জি নিখিল হত্যাকারিদের ধরতে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও গোপালপুর থানা পুলিশের সব রকমের চেষ্টা চলছে। হত্যাকান্ডের দিন থেকেই ২৪ ঘন্টাই নিয়মিত পুলিশ পাহারা থাকলেও পরিবারের সবাই মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরায় কিছুদিনের জন্য তারা তাদের আপনজনদের কাছে চলে গেছে। তবে আমাদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
নিখিলের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী আরতি জোয়ারদার বাদি হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা ও গোপালপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মোকছেদুল আলম বিস্ফোরণদ্রব্য বহন ও প্রয়োগ সংক্রান্ত মামলার বাদী হয়েেেছন।
মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। মামলায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা হলেন- দৈনিক ইনকিলাবের স্থানীয় সংবাদদাতা এবং আলমনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম মারুফি, উপজেলা জামায়াতের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাদশা, বিএনপিকর্মী বীরনলহরা গ্রামের মৃত আব্দুর রশীদের পুত্র ঝন্টু মিয়া। এর মধ্যে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আমিনুল ২০১২ সালের ২ মে নিখিলের বিরুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তি করার অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন। আটককৃত তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিন করে দুটি মামলায় প্রত্যেকের ছয়দিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল শনিবার সকালে বাড়ির সামনে নিজ দোকান তিথি তীর্থ বস্ত্রালয় এন্ড টেইলার্সে পোশাক সেলাইয়ের কাজ করছিলেন নিখিল। এ সময় মোটরসাইকেল যোগে তিন ব্যক্তি এসে দোকান থেকে দর্জি নিখিলকে ডেকে বের করে চাপাতি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে রাস্তার পাশে খাদে ফেলে রেখে চলে যায়। এ হত্যাকান্ডের চার ঘন্টার মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...