টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কমিটি গঠনকে সামনে রেখে পদ পেতে দলটির নেতাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। একে কেন্দ্র করে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও কিছুটা চাঙা হয়ে উঠেছে।
কমিটি গঠন বিষয়ে গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, টাঙ্গাইল জেলা কমিটি গঠন প্রায় চূড়ান্ত। আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা ছিলেন, মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যাঁদের সংযোগ রয়েছে—তাঁদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। আগামী এপ্রিলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে দলটির ভেতরের কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দলের এক অংশ চাইছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করতে।
অপর অংশ চাইছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম সভাপতি ও হাসানুজ্জামিল শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করতে। এ নিয়ে কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে। এ দুই দিন দুই অংশ পৃথকভাবে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দেয়।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, সামনে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তাই নিষ্ক্রিয় কিছু নেতা যাঁরা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তাঁরা পদ পেতে কোন্দল সৃষ্টি করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন।
দলটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন কমিটির সভাপতি পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, সাবেক সভাপতি হামিদুল হক ও সহসভাপতি ছাইদুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন এবং সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) চিত্তরঞ্জন দাস।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ভাই। কেন্দ্রে তাঁর প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি পদ পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। অপরদিকে তাঁকে ঠেকাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির পদে থাকা টাঙ্গাইলের অধিকাংশ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদেরা জোটবদ্ধ হয়েছেন।
জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রার্থী শামসুল আলম বলেন, যাঁর যাঁর রাজনীতি তাঁর কাছে। তাই ভাইদের প্রভাবে নয়, বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখার কারণেই তাঁকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
দলটির স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি পদে আহমেদ আযম খান, সাধারণ সম্পাদক পদে শামসুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ফরহাদ ইকবাল নির্বাচিত হন। গত বছর আহমেদ আযম খান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি হওয়ায় জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে দেন।
ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফকির মাহবুব আনামকে। জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত বছরের ২০ নভেম্বর ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দফা প্রতিনিধি সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। এরপর থেকেই পদ পেতে ইচ্ছুক নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন।
জেলা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এবার সভাপতি পদপ্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম বুধবার বলেন, ‘কমিটি গঠনের বিষয়টি সরাসরি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) হাতে। তবে এ বিষয়ে জেলার প্রায় সব সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য একদিকে রয়েছেন। আশা করি, ম্যাডাম বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।’
সূত্র : প্রথম আলো।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...