টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে টুটুল চৌধুরীর বাড়িতে নেই বিয়ের আনন্দ। আছে শুধু কান্না আর আহাজারি। আশপাশের কয়েক বাড়িতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেলটি ঠিকই আছে। বরের মঞ্চ ও প্যান্ডেলের সব চেয়ার-টেবিল এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। বর-কনের জন্য তৈরি করা মঞ্চটির দিকে কারও নজর নেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে উপজেলার তরফপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে বরযাত্রী ৭/৮ জনের নৌকাযোগে বুইড়া বিল পাড় হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় বর টুটুলের বড় ভাই সিঙ্গাপুরপ্রবাসী রিপন চৌধুরী (৪০) ও তার চাচাতো ভাই ইতালিপ্রবাসী কহিনুর মিয়ার ৮ বছরের শিশু কন্যা স্নেহা আক্তার ও আত্মীয় ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়া (২০) পানিতে ডুবে মারা যায়।
এদিকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত শিশু স্নেহা ও রিপন চৌধুরীর মরদেহ ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয় বলে বর টুটুল চৌধুরী ও গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানিয়েছেন।
আসিফকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটায় মির্জাপুর সদর কবরস্থান মসজিদে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। শুক্রবার বেলা এগারোটায় উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামে পরপর রিপন চৌধুরী ও স্নেহার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়।
মুন্দিরাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের সমবয়সী নূর এ জান্নাতকে বার বার বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন ইতালিপ্রবাসী কহিনুর মিয়া। মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করছেন তিনি।
কহিনুর মিয়া বলেন, ১৪ বছর ধরে তিনি ইতালি থাকেন। আড়াই বছর আগে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ইতালিতে নিয়ে যান। সেখানেই সন্তানেরা লেখাপড়া করছে। চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুই মাস আগে তিনি সপরিবার দেশে আসেন। রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় তাঁদের ইতালিতে ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। এরই মধ্যে মেয়েটি চলে গেল।
কহিনুর মিয়ার বড় ছেলে রাফি বলেন, ইতালিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তিনি। ছোট ভাই অভি নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট বোন স্নেহা আক্তার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামের টুটুল চৌধুরীর সঙ্গে উপজেলার তরফপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকার মজনু মিয়ার মেয়ে লিপা আক্তারের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। দুপুরের খাবার শেষে বাড়ি ফেরার পথে নৌকাডুবিতে উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামের রিপন চৌধুরী, তাঁর চাচাতো ভাই কহিনুর মিয়ার শিশু কন্যা স্নেহা আক্তার ও উপজেলা ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়ার মৃত্যু হয়।
নিহত রিপন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লোকশূণ্য। মাঝে মধ্যে দলে দলে আশপাশের বাড়ির মানুষ আসছেন। অনেকেই আফসোস করছেন। শুক্রবার নির্ধারিত বউভাতের অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য সাজানো প্যান্ডেলটি ঠিকই আছে। কিন্তু সেখানকার সব চেয়ার-টেবিল এলোমেলো। বর-কনের জন্য তৈরি করা মঞ্চটির দিকে কারও নজর নেই। শুক্রবার বিকেলে ডেকোরেশনের লোকজন বিয়ের গেট ও প্যান্ডেল খুলার কাজ করছেন।
এদিকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত শিশু স্নেহা ও রিপন চৌধুরীর মরদেহ ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয় বলে বর টুটুল চৌধুরী ও গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানিয়েছেন।
রিপনের ছোট ভাই বিয়ের বর টুটুল চৌধুরী বলেন, রিপন দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে থাকেন। বিয়ে উপলক্ষে গত ১৭ জুলাই দেশে আসেন। রিপনের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। টুটুল আরও বলেন, তাঁর আরেক ভাই খোকন সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন। শুক্রবার দুপুরে তাদের একটি গাভীন গরু মারা যায়।
এদিকে উপজেলা সদরের ইউনিয়নপাড়া এলাকায় সেলিম মিয়ার বাসায় গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর ছেলে আসিফ মিয়ার লাশ দাফন করা হয়েছে। আসিফের এ বছর মির্জাপুরের ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
আসিফের চাচাতো বোন হাসি আক্তার বলেন, আসিফ সবার কাছে খুবই প্রিয় ও আদরের ছিল। শোকে পরিবারের কেউই গত রাতে খায়নি এবং ঘুমাতে পারেনি। আজ সকালে প্রতিবেশীরা রান্না করে তাঁদের বাসায় নিয়ে এসেছেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...