টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা চর ও ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আর বিক্রির মহোৎসব শুরু করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী খোকা। তবে অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বার বার অভিযান পরিচালনা করলেও কোনভাবেই খোকার বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় খোকার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেননা ভুক্তভোগী কাকুদাইর ও জিগাতলা গ্রামের মানুষ। অপরদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ শতশত বালুবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হচ্ছে এ এলাকার সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, অবৈধ বালু ব্যবসায়ী খোকা সরকারি দলের প্রভাবশালী লোক, তার ভাই সরকার দলের চেয়ারম্যান। এ প্রভাবে এক যুগের বেশি সময় ধরে শীত ও বর্ষা সব ঋতুতেই বাংলা ড্রেজার আর মাটিকাটার মেশিন ভেক্যু বসিয়ে দিন-রাত হাজার হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করে আসছেন তিনি।
তাদের অভিযোগ, এ বালু উত্তোলন নিয়ে বেশি সমালোচনা শুরু হলে প্রশাসন হঠাৎ হঠাৎ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু একদিনের জন্যও এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করতে পারেননি প্রশাসন। শুনেছি এখন আশেপাশের সব ঘাট বন্ধ। তবে অদৃশ্য কোন কারনে খোকার ঘাট এখনও চালু সেটি জানতে চান তারা। অন্যসব বিটবালু ঘাট বন্ধ থাকায় এ ঘাটে ট্রাকের সংখ্যাও এখন বেড়ে গেছে কয়েকগুন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কুকাদাইর-জিগাতলা এলাকার যমুনা নদীর অংশে গেলে তাদের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। অবৈধভাবে জেগে উঠা চর কেটে বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলছে দেদারসে। এছাড়াও বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালুর পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে রীতিমত।
দেখা গেছে. নিকরাইল ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সেতুর কোলঘেষে সারপলশিয়া, সিরাজকান্দী- নেংড়া বাজার, মাটিকাটা, চিতুলিয়াপাড়াসহ ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের ৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন পয়েটেও চলছে বেপরোয়া বালু বিক্রি।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলেন, নম্বরবিহীন অবৈধ বালুবাহী ড্রাম ট্রাক গুলোর অতিরিক্ত ওজনের জন্য চলাচলের ফলে গ্রামের ভিতর দিয়ে তৈরি সড়কগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধুলোবালিতে চারপাশ অন্ধকার হয়ে থাকে। গাছ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বাতাসে উড়া বালু মানুষের চোখ-মুখে গিয়ে ঠান্ডাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এত ক্ষতি হলেও এর প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
জিগাতলা কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিরা জানান, বালু মাটির ট্রাক গ্রামের ভিতর দিয়ে এসে ভূঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে উঠে। ঘাটে ট্রাক প্রবেশের মোড়েই মসজিদটি অবস্থিত। ট্রাকের ধুলোবালির কারণে মসজিদে নামাজ পড়া কষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করায় যেকোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগে ভূঞাপুর-তারাকান্দির সড়ক এলাকায় গড়ে উঠা বালুর ঘাট বন্ধ করা হলেও খোকার অবৈধ বালুর ঘাট কেন বন্ধ হচ্ছেনা এমন প্রশ্নে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, এ উপজেলার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে চর ও ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব অবৈধ বালুর ঘাটে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরও যদি কোনটা চলমান থাকে তাহলে সেটি বন্ধেরও উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, আজও আমরা চারজন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে জেল জরিমানা করেছি। সাধারণত যারা প্রভাবশালী তারা ঘটনাস্থলে থাকেন না। আর ঘটনাস্থলে না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...