এপাড়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ওপাড়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার হাটবাড়ী। মাঝে যমুনার শাখা ঝিনাই। নদীভাঙ্গন ও বন্যা থেকে রক্ষা পেতে ওপাড়ে পাউবো, আর এপাড়ে জেলা পরিষদ বাঁধ নির্মাণ করেছে। ওপাড়ে অক্ষত থাকলেও এপাড়ের বাঁধে শকুনের চোখ পড়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে বাঁধ কেটে মাটি লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। ফলে ঝিনাই নদীর পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রাম হুমকীর মুখে পড়েছে। নির্বিবাদে বাঁধ কেটে মাটি পাচারের ফলে অবাধ পানি ঢুকে বিলিন যাবে কৃষি জমিসহ পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে বীরতারা গ্রামের জিয়াউল হক ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানান যায়, বালু ব্যবসায়ী জাকারিয়া ও সুলতান আনসারী গং ঝিনাই নদীর বাঁধ কেটে মাটি লুটে নিচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জমির মাটি কেটে নেয়ার পর খাস জমিতে নজড় পড়ে ওদের। খাসজমির সাথে নদীর ৮/১০ ফুট উঁচু বাঁধ মাটি কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। এভাবে প্রায় চারশ গজ বাঁধ নিশ্চিহ্ন হওয়ায় আসন্ন বর্ষায়পানি অবাধে ঢুকে বীরতারা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হবে। বহু জমির ফসল বিনষ্ট হবে।
ওই গ্রামের মাতব্বর মজিবর রহমান ও আ. হাকিম জানান, প্রথমে দুই চাষীর কয়েক বিঘা ফসলী জমির টপ সয়েল কিনে নেয় প্রভাবশালী চক্রটি। সেই বাহানায় নদী পাড়ের খাস জমি খনন শুরু করে। রাজনৈতিক কানেকশন থাকায় নির্বিবাদে নদীর উঁচু বাঁধ নিশ্চিহ্ন করে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
গ্রামের দিনমজুর ছাহেরা খাতুন জানান, স্যার গো ওদের বহু হাতে পায়ে ধরছি, কইছি, এইভাবে বাঁধ কাইটা নিলি আর তীরের হগল জমিতে মাথা সমান গর্ত কইরা মাটি নিলি আমাগোর ভিটি নদীতে নামবো। আমরা কুনু থাকমু। কিন্তু হেরা কোনো কথাই হোনে নাই। চেয়ারম্যান মেম্বারগো কইছি। তারা হুনছে। তয় কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই। গ্রামের অপর মাতব্বর বাবুর আলী জানান, উঁচু পাড় ও বাঁধের দরুণ তাদের ভিটেবাড়ি নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতো। এখন বাঁধ তো নেইই উপরন্তু নদীর তলদেশের সাথে সামান্তরাল রেখে বারো বিঘা জমি ৮/১০ ফুট গভীর করে খনন করায় পাড়ার সকল বাড়িঘর, আবাদী জমি, গাছের বাগান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, মাটি পাচারকারি চক্রটি দুইশ গজ উজানে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় পাড় ভেঙ্গে নদী বাঁক খেয়ে ধনুকের রুপ ধারণ করেছে। বর্ষাকালে এখানে ¯্রােতের ঘূর্ণাবত তৈরি হয়। এতো দিন বাঁধ থাকায় বীরতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো গ্রাম ভাঙ্গন ও বন্যার তান্ডব থেকে নিরাপদ ছিলো। এখন সেই রক্ষাবাঁধ নিশ্চিহ্ন হওয়ায় স্কুলসহ পুরো গ্রাম অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
গ্রামের আব্দুল আজিজ ও লিটন মিয়া জানান, বাঁধটি গ্রামীন সড়ক হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। চাপারকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতো শিক্ষার্থীরা। বাঁধের ৪/৫শত গজ নিশ্চিহ্ন করায় এখন যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বাঁধ কেটে মাটি লুটের কথা শুনেছেন। তবে এটি উপজেলা প্রশাসনের দেখার কথা। বীরতারা ইউনিয়ন পরিষদের অনতিদূরেই বাঁধ। মাটির ট্রাক যাবার রাস্তাও পরিষদ ভবন সংলগ্ন। পুরো সপ্তাহ জুড়েই ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম অফিস করেছেন বলে জানান ইউপি সদস্যরা।
বীরতারা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, বাঁধ কেটে মাটি পাচারের খবরটি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি সঠিক।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ শামছুল আরেফীন জানান, গ্রামবাসী লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...