টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ক্রমাগতভাবে বাড়ছে এ জেলার নদ-নদীর পানি। জেলার প্রতিটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী ১৬০ সেন্টিমিটার আর ঝিনাই নদীর পানি ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৭৯টি ইউনিয়নের ৫৫৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর পাশাপশি নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার পৌর শহর। বন্যায় অসংখ্য রাস্তা ঘাট, ঘর-বাড়ি আর ব্রিজ ভেঙে পড়াসহ তলিয়ে গেছে ফসলী জমি। বন্যা দূর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দেয়াসহ রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে যমুনা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার আর ঝিনাই নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৬২১ বর্গ কিলোমিটার নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলা গুলোর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ধনবাড়ী, গোপালপুর, বাসাইল, মির্জাপুর, সখীপুর আর ঘাটাইল।
বন্যা কবলিত ১১টি উপজেলার ৭৯টি ইউনিয়নের অন্তত ৫৫৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ৬টি পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০০টি। আর পানিবন্দি লোক সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ২শ’ জন। অপরদিকে ৭৬১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়েছে। ২৮ হাজার ৮৯৫টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে ৭৬৮৬টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এছাড়াও দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। নদী ভাঙনে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ আর ৩৬টির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সম্পূর্ন কাঁচা রাস্তাসহ ৬’শ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আর ৮১ কিলোমিটার পাকা রাস্তাে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙেছে ৫টি ব্রিজ আর ৪৯টি ব্রিজের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, জেলায় মোট ৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ হাজার ২০১ জন মানুষসহ ১৮টি গবাদি পশু। ১১৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৬০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ছয় লাখ টাকার গোখাদ্যসহ ছয় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার বন্যায় জেলায় ৩ হাজার ৮৩৯ হেক্টর ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ২৭ হাজার ২৩৩জন। চলতি দ্বিতীয় দফার বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮০৪৬ হেক্টর ফসলী জমি নিমজ্জিত হয়েছে। নিমজ্জিত জমি গুলোর ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে বোনা আমন, রোপা আমন (বীজতলা), আউস, সবজি, তিল আর লেবু।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার প্রধান সব নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর পানি। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার রক্ষাবাঁধ ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। পানি সরে গেলে নদীর ভাঙন তীব্র হবে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...