টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নাগবাড়ীতে ফসলি জমির টপসয়েল ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে। বেকু দিয়ে কেটে ট্রাক ভর্তি মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। অনবরত ট্রাক যাতায়াতের ফলে গ্রামীণ রাস্তা দেবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি ভর্তি ট্রাক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করায় স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরা রয়েছে দূর্ঘটনার শঙ্কায়। ফলে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ৮ দিন যাবত মাটি কাটা চলমান থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাগবাড়ীর হাসিনা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছেন আলামিন ও নূর আলম নামের দুই ব্যক্তি। তাদের বিক্রয়কৃত জমির মাটি বেকু দিয়ে কেটে ট্রাক ভর্তি করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকায় আলামিনের মৃত বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাভলী আক্তার কালিহাতী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নাগবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে মাটি কাটা বন্ধের দাবীতে আবেদন করেছেন।
এদিকে, মাটি ভর্তি ট্রাক গ্রামের নতুন রাস্তায় রাত-দিন চলাচল করায় রাস্তা দেবে ও ফেটে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। উচ্চ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্র দূর্ঘটনার ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
নাগবাড়ী হাসিনা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এসএম আনসার আলী বলেন, মাটির ট্রাক বেপরোয়া চলাচল করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অত্যন্ত অসুবিধা হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত রাস্তা প্রতিদিন ব্যপক সংখ্যক ট্রাক চলাচলের ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ ও ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবী করছি।
পাশের জমির কৃষক বলেন, যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে এতে আমরা আমাদের জমিতে চাষ করতে পারবো না। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।
অভিযোগকারী লাভলী আক্তার বলেন, আমার স্বামী আব্দুল আলীম মিয়া বেঁচে নেই। আমাদের ঔরশজাত সন্তান তাহমিদের প্রাপ্য ওয়ারিশ না বুঝিয়ে দিয়েই দেবর আলামিন ও নূর আলম মিয়া জমির মাটি বিক্রি করছেন। আমি মাটি কাটা বন্ধ করতে আবেদন করেছি। সেইসাথে আমার ছেলের প্রাপ্য ওয়ারিশ বুঝে পেতে চাই।
অভিযুক্ত আলামিন মিয়া বলেন, আমার পৈত্রিক সম্পত্তির মাটি বিক্রি করছি। ট্রাক চলাচলের ফলে এলাকাবাসীর অসুবিধা ও জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জমির উর্বরত থাকে উপরের মাটিতে। সেগুলো কেটে নিলে কয়েক বছর ফসল চাষ হবে না।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা যায় না। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন।
কালিহাতী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগবাড়ীর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, জনগণের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে দ্রুত মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...