টাঙ্গাইলে দিনদিন বাড়ছে তামাক চাষ। দেশি-বিদেশী সিগারেট কোম্পানীগুলো বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তামাক চাষে আগ্রহী করছে চাষীদের। চাষে অগ্রীম টাকা দেয়ায় কৃষকও তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর এই চাষে বেশি ঝুঁকছে নারীরা।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চল গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গাবসারা ইউনিয়নের রায়ের বাসালিয়ার তামাক শ্রমিক রজিনা বেগম (৪৮)। অন্যের জমিতে কাজ দিন শেষে মজুরি হিসেবে দেড় শত টাকা। স্বামীর সংসারে হাল ধরতে তিনি তামাক চাষের কাজ করছেন। তার উপার্জিত এই টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ যোগান। বর্তমানে তার স্বামী অসুস্থ্য।
জানা গেছে, যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রায়ের পাড়া বাসালিয়া, গোবিন্দপুর, রুলীপাড়া, রামপুর, বামনহাটা, জংলীপুরসহ চরের বিস্তীর্ণ আরো কয়েক গ্রামে শত শত হেক্টর জমিতে বিষাক্ত এই তামাক চাষ করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশী তামাকজাত দ্রব্য বিভিন্ন কোম্পানিরা বেশী লাভের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে প্রজেক্ট তৈরী করছে। নারী-পুরুষদের পাশাপাশি শিশুরাও তামাক চাষে জড়িয়ে যাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও তামাক শ্রমিকের কাজ করছে। তারা কেউ তামাকের আইলচা বাঁধছে, গাছ থেকে পাতা ভাঙছে, পাতা শুকাচ্ছে, গাছের গোড়ায় থেকে আগাছা পরিষ্কার করছে আবার কেউ বা শুকানো তামাকগুলো বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। তবে শিশুদের দিন শেষে মজুরি দেয়া হয় ২০/৫০টাকা হারে।
গাবসারা ইউনিয়নের রায়ের বাসালিয়ার তামাক শ্রমিক রজিনা বেগম বলেন, তামাকের কাজ করে দিন শেষে ১৫০ টাকা দেয় ক্ষেতের মালিক। উপার্জিত এই টাকা সংসার না চললেও কিছুটা সহযোগিতা করা যায় স্বামীকে। তবে তামাক চাষী লাভবান বেশি হলেও কম মজুরি দেয় আমাদের। অনেক সময় কম টাকাতেই কাজ করতে হয়।
তামাক ক্ষেতে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী বলেন, তামাক চাষে বেশী ভাগই নারীরা কাজ করে থাকি। কাজের পারিশ্রমিক খুবই কম। বর্তমানে একজন পুরুষ শ্রমিকের মূল্য ৩শ ৫০ টাকা থেকে ৪শ ৫০ টা। আর আমরা পাচ্ছি মাত্র ১শ ৫০ টাকা। এতে করে আমরা নারী শ্রমিকরা নায্য মজুরি পাচ্ছি না।
কথা হয় রায়ের বাসালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুল শিক্ষার্থী কাউসার হোসেনের সাথে। কাউসার বলেন, সকালে একটু সময় পড়ে সকাল ৯ টা পর্যন্ত তামাকের কাজ করি। তারপর স্কুলে চলে যাই। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বিকেলে আবার তামাকের কাজ করি। কিন্তু শুক্রবার হলে সারা দিনই কাজ করি। মজুরি হিসেবে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে দেয় তামাক ক্ষেতের মালিকরা।
গাবসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথী জানায়, সপ্তাহের শুক্রবার স্কুল বন্ধ। তাই তামাকের কাজ করছি। ৫ থেকে ৭ ফুট আইলচা বাঁধলে দেয় ৩ থেকে ৫ টাকা। সারাদিন কাজ করলে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দেয় ক্ষেতের মালিকরা। তামাকের কাজ করার পর দুই হাত তেঁতো হয়ে যায়। ঠান্ডা-জ্বর, শুকনো কাশি লেগে যায়।
তামাক চাষীরা জানান, ভুট্টা চাষের তুলনায় তামাক চাষে লাভ হচ্ছে। সিগারেট কোম্পানীগুলো খরচে ও সহযোগিতায় জেগে ওঠা চরে তামাক চাষ করেছি। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় জানি। তারপরও ক্ষেতের জমি পরিত্যক্ত রেখে কি হবে। লাভ বেশি আর চাষের আগেই টাকা পাওয়া যায়।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার জিয়াউর রহমান জানান, তামাক চাষ না করার জন্য চরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তামাকের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রান্তিক কৃষকের নিয়ে করা হয়েছে। তবুও কিছু কৃষকরা প্রলোভনে পড়ে তামাকের চাষ করছে।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেকটা তামাক চাষ কম হয়েছে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...