টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার গেন্দু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এসময় একজন সাক্ষীরও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া ও মো. শামছুল হক আলাদাভাবে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক কাইয়ুম খান চৌধুরী।
এ নিয়ে গনধর্ষনের পর হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৫ আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ একজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হল।
জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বিচারক বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এরা হলেন, বাসের চালক ময়মনসিংহের মির্জাপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে হাবিব, সুপারভাইজার একই এলাকার সুলতান আলীর ছেলে সফর আলী ওরফে গেদু। এছাড়াও একই বাসের আরেক হেলপার ময়মনসিংহের লিটন মিয়া ঘটনার সাক্ষী হিসাবে জবাববন্দি দেন। সে ঘটনার ২দিন পর ওই বাসে হেলপারী করতে গিয়ে ঘটনাটি বাসের স্টাফদের কাছে জানতে পেরেছিল বলেন উপ-পরিদর্শক।
এর আগে মঙ্গলবার এ মামলায় গ্রেফতার বাসের হেলপার কামাল হোসেনের ছেলে আকরাম হোসেন, হেলপার এমদাদুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও হেলপার মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ির খোরশেদ আলীর ছেলে শামীম হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
উলেখ্য, উলেখ্য, শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকার বনাঞ্চলের রাস্তার ধারে এক তরুনী রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানা পুলিশ। পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়ির সহকারি পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসে।
শারিরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা নিরাপদ ভেবে অজ্ঞাত ওই তরুণীর লাশ বনের সড়কে ফেলে রেখে যায় ধারনা করে শনিবার হত্যা মামলা দায়ের করে মধুপুর থানা পুলিশ। এরপর থেকে অপরাধীদের সনাক্ত করার জোর চেষ্টা চালায় তারা।
তরুনীর বড় ভাই গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে সোমবার রাতে মধুপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লাশের ছবি দেখে পরিচয় সনাক্ত করে। পরবর্তীতের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যর উপর নির্ভর করে জোড়ালো অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
নিহত তরুনী বড় ভাই সাবেক সংবাদকর্মী হাফিজুর প্রামানিক জানান, তার ছোট বোন রুপা খাতুন অনার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যায়নরত ছিল। পাশাপাশি সে শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে কর্মরত ছিল। গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে সে বগুড়া যায়। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তার এক সহকর্মীর সাথে যাত্রা করে। তার সেই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় সে এলেঙ্গাতে নেমে যায় এবং রুপা ঐ বাসেই ময়মনসিংহ যাচ্ছিল। কিন্তু সে সঠিক সময়ে ময়মনসিংহ না পৌছায় তার সহকর্মীরা মোবাইলে ফোন করলে এক যুবক ফোনটি রিসিভ করে এবং রুপা ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছে বলে জানিয়ে কেটে দেয়। এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌছায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর শেরপুর অফিস থেকে রুপার বড় ভাই হাফিজুর প্রামানিক এর মোবাইলে রুপা কর্মস্থলে না ফেরার বিষয়টি অবগত করে তারা। পরবর্তীতে রুপার মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বড় ভাই ময়মনসিংহ কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। সোমবার গণমাধ্যমের খবর পড়ে সে মধুপুর থানায় এসে রক্তা অবস্থায় পড়ে থাকা তরুনীর লাশের ছবি দেখে তার বোন বলে সনাক্ত করে। এসময় তিনি রুপার কর্মস্থল এর সহকর্মীদের দেওয়া তথ্য থানা পুলিশকে অবগত করে।
এদিকে লাশের পরিচয় না মেলায় শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রিয় গোরস্থানে দাফন করে পুলিশ।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...