দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় ২২-২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করেন। এর কারণে দুই ঈদের ছুটিতে এ মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসনের নানা উদ্যোগে স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এবার ঈদেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ভোগান্তি দূর করতে উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ানওয়ে (একমুখী) চলাচল করবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত অতি দ্রুত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। সেতুপূর্ব ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কেও রয়েছে একাধিক খানাখন্ড। ফলে ঢাকামুখী যান চলাচলে হতে পারে বিঘ্ন। এলেঙ্গা থেকে সেতুর দিকে মহাসড়কে চারলেনে কাজে রয়েছে ধীরগতি।
উত্তবঙ্গগামী বাস চালক আব্দুল হালিম বলেন, ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতে যানজট লাগে। গাড়ি ওভারটেকিং ও বিকল হওয়ার ফলে যানজট লেগে যায়। গত কয়েক বছর ধরে যানজট কম হয়। এবারো যদি পুলিশ প্রশাসন ভালো ডিউটি করে তাহলে যানজট থেকে মুক্তি পাবো।
আরেক চালক মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আমরা যানজটের আশঙ্কা করছি। ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন। এলেঙ্গার পর থেকে বঙ্গবন্ধুসেতু পর্যন্ত দুইলেন হওয়াতে যানজটে পরতে হয়। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলছে এ কারণে মহাসড়কে যানজট হবে। আগে তো মহাসড়কে যানজট হলে ৭-৮ ঘন্টা বসে থাকতে হয়। গত কয়েক বছর তেমন যানজটে পরতে হয় না। গতবারের মতো যদি প্রশাসন কাজ কারে তাহলে এবারও আমরা নির্বিঘ্নে যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবো।
চালক আকরাম আলী বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে এবার আমরা যানজটের বেশি আশংকা করছি। যানজটে পড়লে আমাদের সময়ও বেশি লাগে অর্থনীতির দিকেও ক্ষতি হয়। পুলিশ প্রশাসন যদি ঠিক মতো রাস্তায় কাজ করে তাহলে গতবারের মতো এবারও আমরা শান্তিতে বাড়ি যেতে পারবো।
ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরি করেন ফয়সাল মিয়া। তিনি বলেন, যানজট হলে বিশেষ নারী ও শিশুদের বেশি ভোগান্তিতে পরতে হয়। পুলিশ যদি যত্রতত্র ভাবে গাড়ি পার্কিং করতে না দেয় রাস্তায় তাহলে যানযট হবে না।
যাত্রী কবিতা আক্তার বলেন, আমরা যারা নারীরা যাত্রী ঈদে বাড়ি যাই তখন দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে থাকতে হয়। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত কোথাও গাড়ি ব্রেক করার জায়গা নেই তখন আমাদের বাথরুম আসলে কোথাও যেতে পারিনা। পুলিশ যেহেতু এই ব্যবস্থা করেছে তাহলে সুবিধা হবে। পুলিশ প্রশাসন ঠিকমতো ডিউটি করলে আশা করি যানজট হবে না।
যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলছে এ ঈদের সময় যদি কাজ বন্ধ রাখা হয় তাহলে বেশি যানজটে পরতে হবে না। এ কাজের জন্য মাঝে মাঝে রাস্তায় গাড়ি থেমে থাকতে হয়। এক সঙ্গে এতো গাড়ি রাস্তায় নামলে সমস্যা হবেই। অতিরিক্ত গাড়ির চাপের পাশাপাশি ফিটনেসহীন গাড়ি ও বেপরোয়া গাড়ি চলার কারণ বড় সমস্যা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড গ্রুপের প্রকল্প সমন্বয়ক মিজান সরোয়ার বলেন, আমরা ঈদ উপলক্ষে চার কিলোমিটার রাস্তা ছেড়ে দিবো। উত্তরবঙ্গের মানুষ এবার স্বস্তিতে বাড়ি যাবে। আশা করছি এবার ঈদে মহাসড়কে যানজট হবে না। ৬০০ কোটি টাকার কাজটি শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৯ থেকে ২০ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ঈদে এর সংখ্যা আড়াই থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। গতবছর সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছিল। যখন সেতুর ওপর গাড়ির চাপ পড়ে তখন টোল আদায়ে সমস্যা দেখা দেয়। সাময়িকভাবে টোল বন্ধ থাকে। এরজন্য যানজট কিছুটা হয়। এবার সেতুর দু’পাশে ৯টি করে ১৮টি এবং মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে ৪টি টোল বক্স বসানো হবে। মহাসড়কে চার লেনের কাজে ধীরগতি চলছে। এরমধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে যানজট হবে না।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের মাঝে পানি, শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এবার ঈদে ৭’শ পুলিশ সদস্য ২৪ ঘন্টা হাইওয়েতে পালাক্রমে ডিউটি পালন করবে। অনেক সময় ঈদের আগের দিন রাস্তা তুলনামূলকভাবে ফাঁকা হয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীরা ফাঁকা রাস্তায় বাড়িতে যেতে নিলে ছিনতাইকারী বা মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারে। সে জন্য পুলিশ ঈদের সাত দিন আগে থেকে ঈদের পরের দুইদিন পর্যন্ত হাইওয়েতে ডিউটি করবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...