টাঙ্গাইলে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় খেটে-খাওয়া মানুষের জনজীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ ও হতাশা। এই শীতের প্রকোপে ভালো নেই তারা। কমেছে আয়-রোজগার। এতে করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। তাদের মধ্যে বেশি হতাশায় পড়েছেন- ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান চালক, অটোরিকশা চালক ও দিন মজুর শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।
রহিজ উদ্দিন, বয়স প্রায় ৫২। বঙ্গবন্ধু পূর্ব রেল স্টেশনে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘গরমকালে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। কিন্তু শীতের সময়ে অর্ধেকে নেমেছে। কেননা শীতে অটোভ্যানে যাত্রী উঠে না। ঠান্ডায় বাতাস বেশী লাগে। এখন মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। দিনে যা রোজগার হচ্ছে এতে করে সংসার চলছে না। স্থানীয় এক এনজিও থেকে ঋন নিয়ে অটোভ্যান বানিয়েছিলাম। কিস্তি নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি।’
অপর এক অটোভ্যান চালক কদ্দুস মিয়া। সে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশন থেকে ভূঞাপুর সড়কে ভ্যান চালাই। বাড়ি পাথাইলকান্দি এলাকায়। তিনি বলেন, ‘শীতকাল এলে আয় কমে যায়। সারাদিন ঘুরে ২০০ টাকাও আয় হয় না। শীত আসলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হয়। ঠিকমতো ভ্যান চালানো যায় না। গতবারের চেয়ে এবার বেশি শীত পড়েছে। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে।’
শুধু রহিজ বা কদ্দুস মিয়া নয়। তাদের মতো এমন আরও শতশত এসব পরিবহন শ্রমিকরা শীতের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। শীতের মধ্যে দিন মজুরের কাজও পাওয়া যায় না। এদিকে, নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার তীব্র শীতে কষ্টে রাত্রীযাপন করছেন। এসব মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য পাচ্ছেন না শীতবস্ত্র। তবুও শীতের সাথে যুদ্ধ করে চলছে তারা।
এদিকে, গত সোমবার ২২ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টাঙ্গাইল জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফলে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন। সপ্তাহজুড়ে শীতের এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। শীতের কারণে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো, কায়ছারুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত সোমবার তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাপমাত্রা বাড়লে যথারীতি ক্লাস চলবে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...