করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইলকে অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বেশ আগেই। দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
শুধু সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি এমন ধারণাও পাল্টে যাচ্ছে মানুষের। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত টাঙ্গাইল জেলায় করোনার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। হু হু করে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততায় বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় জেলায় আরো ১১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (৩ জুলাই) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ২৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩১২ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম জানান, রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ছয়টি শয্যার মধ্যে ৫টিতেই করোনার রোগী ভর্তি আছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ১০৫জন ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে আইসিইউ ওয়ার্ডে পাঁচজন, করোনা ইউনিটে ৩৮ জন ও আইসোলেশনে ৬২জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
টাঙ্গাইলে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে গত জুন মাসে। আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর ২৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে জুন মাসে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন বলে আরএমও শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ৮ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। এরপর গত ৩১ মে পর্যন্ত ১৪ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬ জন। জুন মাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। ১২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের হার ছিল ৩২ শতাংশের ওপরে। জুন মাসে ২ হাজার ৯৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ মাসে ১১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত জুন মাসে। অর্থাৎ এ জেলায় সংক্রমণ আট হাজার ছাড়িয়েছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে চলছে সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল শহরে লকডাউন বাস্তবায়নে ১৩টি চেকপোস্ট ও পাঁচটি মোবাইল টিম কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাব উদ্দিন খান জানান, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। করোনা প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজিবের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন ‘টাঙ্গাইল জেলার বিত্তবান লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই, আপনারা এই করোনা মহামারীর বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে একটি তহবিল গঠন করে আমাদের টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কমপক্ষে ২৫ হাইফ্লো অক্সিজেন ন্যাসাল ক্যানুলা প্রদান করুন যাতে করে আমরা আরো নির্বিঘ্নে করোনা রোগীর চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে পারি!!!’
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...