আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলা এবং একটি অস্ত্র মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের দুটি আদালতে সহিদুরের এই দুই মামলার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক ছিলেন সহিদুর রহমান। পরে গত ২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালত ওই দিন তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। একই দিন সহিদুর দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন অস্ত্র মামলাতেও আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত ওই দিন তাঁর অস্ত্র মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি করেননি।
টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান জানান, টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আজ ফারুক হত্যা মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে জেরা করার কথা ছিল। কিন্তু ওই দুজন সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় জেরা হয়নি। এ সময় সহিদুরের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। তাঁরা সহিদুরকে যেকোনো শর্তে জামিন মঞ্জুরের দাবি জানান। এ সময় পিপি এস আকবর খান, বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আলী আহমেদ, মহসিন সিকদার, অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান, নুরুল ইসলাম তাঁর জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। পরে বিচারক সিকান্দার জুলকার নাইন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
পরে দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অস্ত্র মামলায় সহিদুরের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সাউদ হাসান এই জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করেন। শুনানির সময় আদালতে সহিদুরসহ অন্য কোনো আসামিকেই হাজির করা হয়নি। তবে সহিদুরের বাবা সাংসদ আতাউর রহমান খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তিকে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করে। ওই দুই আসামির জবানবন্দিতে এই হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা এবং তাঁর অপর তিন ভাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খানের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তার পরপরই সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। ২২ মাস পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আমানুর রহমান খান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় দুই বছর হাজতে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে তাঁর অপর দুই ভাই এখনো পলাতক। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
অপর দিকে সহিদুর আত্মগোপনে যাওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী থেকে দুটি পিস্তলসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর স্বীকারোক্তিতে এই পিস্তল সহিদুর তাঁর কাছে রাখতে দিয়েছিলেন বলে জানান। এ ঘটনায় সহিদুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ সহিদুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...