শিক্ষা, সংস্কৃতি আর রাজনীতির খ্যাতি সম্পন্ন জেলা টাঙ্গাইলের স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সৃষ্টি হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের আটটি আসনই মহাজোটের দখলে থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই চলছে অঙ্ককষাকষি।
পরপর দু’বার ক্ষমতায় থাকাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্তিশালী হলেও অনেকটাই ঘরবন্দি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি। টাঙ্গাইলের বিগত সময়ে ঘরবন্দি রাজনৈতিক কর্মসূচীর বাইরে তেমন কোন কিছুই করতে পারেনি জেলা বিএনপি। এ জন্য জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বিরোধ ও কোন্দলকেই দায়ী করেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সরকারে থাকায় অনেকটাই নিবর-অলস সময়ই পাড় করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলীয় ছোট-খাটো কর্মসূচীর বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ফারুক আহমেদ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতেই সরব সময় পার করেছে।
কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগমনি বার্তা থেকেই নড়ে চড়ে বসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের বিগত সময়ে উন্নয়ন চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে আটঘাট বেধেই মাঠে নামে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নির্বাচনী আবেশে আওয়ামী লীগ ব্যস্ত সময় কাটালেও বিএনপি’র অবস্থান ছিল খুবই নাজুক।
কিন্তু বর্তমান সরকারের সর্বদলীয় নীতির কারণে পূর্বের অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয় বিএনপি। গঠন হয় ঐক্যজোট। ঐক্যজোটের হাত ধরেই ধীরে ধীরে নির্বাচনের মাঠে আসে বিএনপি।
টাঙ্গাইলে এখনো বিএনপি’র বড় কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী চোখে না পড়লেও ভিতরে ভিতরে দল ও ভোটারদের গুছানোর কাজ চলছে। তবে রাজনীতির নতুন সমীকরণ চলছে টাঙ্গাইল-২ (ভ’ঞাপুর-গোপালপুর) আসনের প্রার্থীতা নিয়ে।
টাঙ্গাইলের প্রত্যেকটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আটটি আসনে আটজনকে নৌকার মাঝি ঘোষনা করে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে মনোনয়ন বঞ্চিতরা কিছুটা নাখোশ হলেও তা ধীরে ধীরে কেটে যাওয়ার আশাই ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। টাঙ্গাইল-২ (ভ’ঞাপুর-গোপালপুর) ব্যতিত অন্যসব আসনে মনোনিত ও মনোনয়নবঞ্চিতদের নেতাকর্মীরা কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ শুরু করলেও নতুন সমীকরণ দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইল- ২ আসন নিয়ে।
একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অন্যতম আসামী আব্দুস সালাম পিন্টুর এই নির্বাচনী আসনটি বিএনপি’র ঘাটি খ্যাত হলেও বিগত দুই নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। তবে এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিতামূলক হবে এমন ইঙ্গিতেই নির্বাচনী মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে আটঘাট বেধেই নামে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জনসমর্থন তৈরি করতে সক্ষম হয় জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভির হাসান ছোট মনির। অন্য প্রার্থী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ব্যতিক্রমধর্মী কাজের কারণে তৃণমূলে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। কিন্তু বাধ সাথে বর্তমান এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের পুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল। প্রথম দিকে মাঠে তেমন একটা দেখা না গেলেও শেষ সময়ে এসে তিনিও মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে। নির্বাচনী মাঠে দেখা দেয় নতুন সমীকরণের। দলীয় নেতাকর্মীরা শুরু থেকেই বিভক্ত থাকলেও শেষ দিকে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ সামনে আসে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভির হাসান ছোট মনিরকে নৌকার মাঝি ঘোষনা করা হয়। এসময় তার সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ করার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পুরোদমে।
প্রতিদ্বন্ধিতামূলক এ নির্বাচনে বিএনপি’র ঘাটি খ্যাত এ আসনটির জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থীর বিকল্প নেই এমন ভাবনা থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভির হাসান ছোট মনির পক্ষেই একাট্ট্রা হতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনই ঘটে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। কেন্দ্র থেকে এ আসনে বর্তমান এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের পুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল কেও মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ খবরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। আবারো বিভক্ত হয়ে যায় নেতাকর্মীরা। তবে শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারি এ বিষয়টি টক অব দা টাউনে পরিণত হয়।
জনসাধারণে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। তানভির হাসান ছোট মনিরই কি নৌকার মাঝি? নাকি তাকে বাদ দিয়ে বর্তমান এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের পুত্র খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে নৌকার মাঝি করা হয়েছে এ প্রশ্ন ঘুরপাকখায় দিনব্যাপি। কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকায় দুপক্ষই নিজেদের পক্ষে জোর অবস্থান নেয়। এনিয়েই শুরু হয় রাজনৈতিক নতুন সমীকরণ।
শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? এই প্রশ্নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগে এই সমিকরণ দেখা দিয়েছে। তবে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব।
তবে এই আসনটির বিজয় ধরে রাখতে শক্তিশালী প্রার্থীর বিকল্প নেই বলেও অভিমত প্রকাশ করেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি জনসমর্থন ও মাঠে শক্ত অবস্থান আছে এমন প্রার্থী যদি বাছাইয়ে কোন প্রকার ভ’ল হয় তাহলে আসনটি আর ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের উপরই আসনটিতে নৌকার জয় পরাজয় নির্ভর করছে বলেও নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন। যাকেই শেষ পর্যন্ত নৌকার মাঝি করা হোক না কেন দলীয় বিভেদ ও বিরোধ দ্রæত মিটিয়ে ফেলতে না পারলেও নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...