প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও নববর্ষকে ঘিরে পুরো মাস জুড়ে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হবে বৈশাখী মেলা। জেলার ঘরে ঘরে চলবে উৎসব আয়োজন। আর এসব মেলার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে মাটির তৈরি নানা সামগ্রী। এ সকল সামগ্রী তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন টাঙ্গাইলের পৌর এলাকার এনায়েতপুরের পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
সরেজমিনে পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখকে সামনে রেখে পাল পাড়ায় এখন দিন রাত মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারী সদস্যরাও ব্যস্ত এসব দ্রব্য সামগ্রী তৈরিতে।
চাকা ঘুরিয়ে মাটি প্রক্রিয়াকরণ করে নিপুন হাতে তৈরি হচ্ছে ফুলদানি, ব্যাংক, পুতুল, গরু, ঘোড়া, হাতি, পাখিসহ নানা বাহারি দ্রব্য সামগ্রী। বৈশাখী মেলাগুলোতে বিশেষ এলাকা জুড়ে সাঁজানো এ সকল মাটির তৈরি দৃষ্টিনন্দন পসরা ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষকেই সমানভাবে আকৃষ্ট করে। বৈশাখের এ সময়য়টাতে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রিও হয় ভালো। মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী মেলায় পাঠানোর জন্য এখন চলছে রং তুলি দিয়ে শেষ আঁচড়ের কাজ।
জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের এনায়েতপুর এলাকায় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন জায়গা থেকে এঁটেল মাটি কিনে আনা হয়। তারপর সেই মাটিগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দ্রব্য সামগ্রীর উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়।
মৃৎ শিল্পী অঞ্জলি রাণী পাল জানান, “ছোট বেলা থেকেই আমি মাটির তৈরি জিনিপত্রের কাজ করে যাচ্ছি। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে আমাদের কাজের প্রস্তুতি একেবারেই শেষ পর্যায়ে।”
সুশীল পাল জানান, “বছরের অন্য সময়ে মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা বেশী না থাকলেও বৈশাখ মাসে চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। বৈশাখে নতুন বছর উদ্যাপন ও বৈশাখী মেলার কারণে জেলার মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা বেশী থাকে বলে জানান তিনি।”
মৃৎ শিল্পী অজিত পাল জানান, “বছরের অন্য সময়ে আমাদের তৈরি মাটির সামগ্রীর চাহিদা বেশী থাকে না। বৈশাখ মাস এলে এই দ্রব্যের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। যার কারনে আমাদের ব্যস্ততাও বেশী থাকে। অভিযোগের সুরে তিনি জানান, সিলভার ও প্লাস্টিকের আগ্রাসনে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই শিল্প। এখন এ শিল্পের চাহিদা অনেকটা মেলা কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে।”
দিপক পাল নামের অপর এক মৃৎশিল্পী জানান, “হাজার বছরের ঐতিহ্য আমাদের এ মৃৎশিল্পী। আমার চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্তই কাজ করে থাকি। বৈশাখে মাসে কোন কাজ করা হয় না। এটা অনেক বছর ধরেই আমাদের পূর্ব পুরুষরা করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই একমাস বিশ্রামে থাকা হয়। কোন কাজ করা হয় না। কালের আবর্তে আমাদের এ শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের নিকট একটাই দাবি যত দ্রুত সম্ভব এই শিল্পটা টিকিয়ে রাখার জন্য যথাথথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...