করোনার প্রভাবে চরম চালক সংকটে পড়েছেন টাঙ্গাইলের অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। এরপরও রয়েছে যাত্রী সংকট। এতে চরম বিপাকে এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী আর চালক সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত এই ব্যবসায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয় আর দূর্দিন। এর ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এ ব্যবসায় লিপ্ত মালিকরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারী প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, জেলা শহর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোগী পরিবহনে নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৩৬টি হলেও টাঙ্গাইল জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির অর্ন্তভুক্ত গাড়ীর সংখ্যা ২৮টি। ঢাকা, ময়মনসিংহ আর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য জেলা প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়া ৪ হাজার টাকা। এছাড়াও মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয় চালকদের। এরপরও রয়েছে ঢাকা, ময়মনসিংহ আর সিরাজগঞ্জে যাতায়াত খোরাকি ৫’শ আর জেলার ভিতর ২’শ টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডসহ আশপাশে দাঁড়ানো রয়েছে প্রায় ২০টি অ্যাম্বুলেন্স।
এ সময় কথা হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক মনির (২৮)এর সাথে। সে বলেন, প্রায় সাত বছর যাবৎ অ্যাম্বুলেন্স চালনায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। তবে করোনার কারণে প্রায় মাস খানেক সময় অ্যাম্বুলেন্স চালানো বন্ধ রাখতে হয় তাকে। আক্রান্তের শঙ্কা আর প্রতিবেশীদের চাপেই বন্ধ ছিল তার অ্যাম্বুলেন্স চালানো। এ কারণেই বেশীর ভাগ চালককে বিরত রাখতে হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স চালানো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অবশেষে পেটের দায়ে আবার অ্যাম্বুলেন্স চালাতেই আসতে হয়েছে তাকে। চলতি মাসে পূণরায় অ্যাম্বুলেন্সে উঠলেও নেই যাত্রী। গত সাতদিনে একটি রোগীও পাননি তিনি। এতে তার সংসার ব্যয় চালানোই অসম্ভব হয়ে পরেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অ্যাম্বুলেন্স চালানো বাদ দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিতে হবে এই অ্যাম্বুলেন্স চালকদেও বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাম্বুলেন্স চালক আমিনুল ইসলাম (৩০) বলেন, প্রায় দশ বছর যাবৎ এ পেশায় লিপ্ত রয়েছি। এ ব্যবসায় বর্তমান সময়ের মত এমন দূর্দিন কখনও দেখিনি। গত দশদিনে একটি যাত্রীও পাননি তিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে মালিক আর চালকদের না খেয়ে মরতে হবে। যদিও অ্যাম্বলেন্স চালকদের জন্য নির্ধারন আছে মাসিক বেতন। তবে অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা রোগী পরিবহন করতে না পারলে চালকদের বেতনটাই দিবেন কিভাবে। কেননা এই স্ট্যান্ডের অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্স মালিকেরই সংসার চলে এই ব্যবসার উপর।
এ সময় তিনি আরো বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কারণে প্রায় দুই মাস যাবৎ বাড়ী ছাড়া তিনি। করোনার ভয়ে এলাকার মানুষ তাকে বাড়ী থাকতে দিচ্ছেনা। এ কারণে বউ আর বাচ্চাদের রেখে অ্যাম্বুলেন্সে রাতদিন কাটছে তার।
অ্যাম্বুলেন্স মালিক ফজল মিয়া বলেন, করোনার শুরু থেকে চালক আর যাত্রী সংকটে রয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। এ কারণে চরম দূর্দিন আর দূর্দশার মধ্য দিয়ে কাটছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত এই ব্যবসায়ীদের পারিবারিক জীবনযাপন। বিশ্বমহামারি কবলে পরে পথে বসার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন তারা। একটি অ্যাম্বুলেন্স নামাতে তাদের কমপক্ষে লেগেছে ৭ থেকে ৮ লাখ। স্বাভাবিক সময় মাসে প্রতিটি গাড়ীর উপার্জন যেখানে ছিল কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এখন সেই গাড়ীর উপার্জন এসে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে চালকের বেতন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, আবার খোরাকীর টাকা। এরপরও রয়েছে প্রতিটি গাড়ীর পিছনের মাসে আনুসাঙ্গিক খরচ কমপক্ষে আরো ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, তার মত শুধু অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা এখন পথে বসে গেছেন। এত টাকার অ্যাম্বুলেন্স খাটিয়ে যেখানে পরিবারের খরচই জুটছেনা। সেখানে চালক বেতন আর গাড়ীর আনুসাঙ্গিক খরচ জুটাবো কিভাবে। ব্যবসায়ীদের এই বিপর্যয়রোধে সরকারী সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর বলেন, টাঙ্গাইলের অ্যাম্বুলেন্স গুলোতে দেখা দিয়েছে চরম যাত্রী সংকট। বেশ কিছুদিন চালক সংকট থাকলেও এখন কিছুকিছু চালক পাওয়া যাচ্ছে। তবে গাড়ী না চললে চালক দিয়ে কি হবে। এখন মালিক আর চালকদের ভবিষ্যত নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারী প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...