প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে দিতে পারে না। এর প্রমান রাখলো জন্মগত ভাবেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা। অক্ষমতাকে জয় করে ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ ফাইভ। শুধু সেই নয় তার বাবা, ভাই আর বোনও প্রতিবন্ধী। এক পরিবার চারজন প্রতিবন্ধী আর প্রতিবন্ধী মেয়ের এমন সাফল্য পাচ্ছে এলাকায় জুড়ে প্রসংশা।
প্রতিবন্ধী হলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই অপ্রতিরোধ্য জাহানারা। ২০১৮ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৩.৫০ পায় জাহানারা।
পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসএসসি-তেও জিপিএ-৫ পেতে হবে, এটাই ছিল জাহানার ইচ্ছে আর স্বপ্ন । তার এ স্বপ্নপূরণে কোন বাধাই থামাতে পারেনি। অসম্ভবকে সম্ভব করে মেধার স্বাক্ষর রেখে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এ বছর ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া গ্রামের মো.জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। জাহাঙ্গীর আলমও একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এছাড়াও জাহানারার পরিবার প্রতিবন্ধী ভাই বিজয় আর বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বোন তানিয়া।
জাহানারার মা বিনা বেগম বলেন, জাহানারা জিপিএ-৫ পেয়েছে এ নিয়ে আমরা বেজাই খুশি। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীকতা নিয়ে মেয়েটি সংগ্রাম করে এতদূর এসেছে। তবে মেয়ের রেজাল্টে খুশি হলেও দুশ্চিন্তার অন্তর নেই মা বীনার। কারণ মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে হলে ওকে কলেজে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে তেমন ভালো কলেজ বা লেখাপড়ার সুযোগ কম।
এ হতাশা থেকে তিনি বলেন, একটি ভালো কলেজে দিতে গেলে সেখানে তার সাথে কাউকে রাখতে হবে। যেহেতু জাহানারা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এ কারণে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। তাই কীভাবে মেয়েকে লেখাপড়া করাবেন এনিয়ে হতাশ তিনি। তবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করবেন বলে জানান মা বীনা বেগম।
তিনি আরো জানান, ২০০০ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি বীনা বেগমের কোল জুড়ে আসে জাহানারা। জন্মগ্রহণের পর থেকেই জাহানারা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। সামাজিক অনেক প্রতিকূলতাও মোকাবেলা করতে হয় তাদের। অভাবের সংসার। তারপরও বেড়ে ইঠা শিশুটির চাহনি, মেধা মা বিনার মনে সাহস যোগায়। মায়ের কাছে প্রথমে অক্ষর জ্ঞান নিতে থাকে জাহানারা। বাসা থেকে দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সহজ ছিল না। এ কারণে তাকে ঘাটাইল প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করা হয়। ওই বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণিতেও ভালো রেজাল্ট করে সে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে একই স্কুল থেকে পিএসসিতে ও ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৩.৫০ পায় জাহানারা।
জাহানারার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও দিনমুজুরির কাজ করেন। ফলে দিনমুজুরির কাজ করে যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। এরপরও কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন জাহানারা প্রতিবন্ধী বাবা।
বিনা বেগম জানান, মেয়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। তবে শারীরিকভাবে সে একজন অসম্পন্ন মেয়ে হওয়ায় ওটা তার পক্ষে অসম্ভব। এছাড়াও মেডিকেলে পড়তে গেলে অনেক ব্যবহারিক কাজ থাকে এমনটা বোঝানো হয়। এ কারণে জাহানারা এখন লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হতে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বুলবুলি বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী জাহানারা স্কুলে থাকাকালীন আমরা তাকে অনেক সহযোগীতা করেছি। আমি জাহানারার মতো প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রতিবন্ধীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। জাহানারার সাফল্যের কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি। এছাড়াও আমি জাহানারা ভবিষ্যত স্বপ্নপূরণ হোক এমনটাই আশা করি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...