করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বনের প্রাণিকূলেও। খাবার না পেয়ে মধুপুর বনের বানর-হনুমানসহ পশু-পাখি একেবারে নাকাল। খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে বেঘোরে মারা যাচ্ছে অভুক্ত বানর-হনুমান।
পশু-পাখি বিশারদ ও গবেষক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন জানান, জানুয়ারি-এপ্রিলে মধুপুর বনে অসংখ্য পর্যটক আসা-যাওয়া করে। বনের বানর-হনুমানসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে থাকে। পর্যটকরাও খুশি হয়ে এগুলোকে কলা, বিস্কুট, চিপ্স, পাউরুটিসহ নানা ধরনের বাড়তি খাবার দিয়ে থাকে।
এবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে প্রশাসন থেকে এ বনে পর্যটক আসা-যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে করে মধুপুর বনের জাতীয় উদ্যান, দোখলা পিকনিক স্পট, লহুরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্র ও চিড়িয়াখানাসহ দর্শনীয় স্থানগুলো একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সরকারি খাবারেরও অপ্রতুলতা রয়েছে। ফলে এ বনের বানর-হনুমানগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা, জাতীয় সদর উদ্যান, চাড়ালজানি ও রসুলপুর রেঞ্জের আওতায় বানর-হনুমানের খাদ্য উপযোগী শাল-গজারি, কাইকা, সাইদা, আজুলী, জয়না, ভুতুম, কুম্বি, জিগা, সোনালু ও সুন্দুরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উজাড় হওয়ার কারণেও বানর-হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
মধুপুর উপজেলার জলছত্র গ্রামের আনারস চাষি ওমর শরীফ ও মুনতাজ আলী জানান, প্রতিদিন দল বেঁধে বানর-হনুমানগুলো বন থেকে বেরিয়ে আশপাশের আনারস, কলা ও সবজি বাগান তছনছ করে এবং বিভিন্ন ফল-ফলাদি সাবাড় করে ফেলে। এসব ফল-ফলাদি ও ফসল রক্ষায় অনেকেই বিষটোপ ব্যবহার করে থাকে। এতে অনেক বানর-হনুমান মারা যাচ্ছে।
গাছাবাড়ী গ্রামের স্কুলশিক্ষক সন্তোষ কুমার জানান, বন থেকে বানর-হনুমানগুলো খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আনারস, কলাবাগানে যেতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক পাড়ি দেওয়ার সময় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে।
বেড়িবাইদ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জুলহাস উদ্দিন বলেন, মধুপুর বনাঞ্চলের বানর-হনুমান ও হরিণের জন্য সরকার প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু এ বরাদ্দ প্রাণীগুলোর জন্য সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় না। এ জন্যই অভুক্ত অবুঝ প্রাণীগুলো খাবারের সন্ধানে বন ছেড়ে লোকালয়ে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
মধুপুর বনের লহুড়িয়া বিটের বিট অফিসার আ. জলিল জানান, টাঙ্গাইল বন বিভাগের আওতায় জাতীয় সদর উদ্যান, দোখলা ও চাড়ালজানি রেঞ্জে প্রায় ১০ হাজার বানর-হনুমান রয়েছে। এদের সরকারিভাবে টোকেন খাবার হিসেবে কলা, বাদাম ও বিস্কুট দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় চাহিদামতো খাবার দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া করোনার কারণে পর্যটক আসা বন্ধ হওয়ায় বাড়তি খাবারও পাচ্ছে না তারা।
তবে মধুপুর বনের সহকারী বন সংরক্ষক জামাল হোসেন বলেন, এ বনের বানর-হনুমানগুলোকে বরাদ্দ অনুযায়ী নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়।
এসআর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...