মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনা, মুক্তিযোদ্ধা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের কাক্ষিত স্বাধীনতা। যারা দেশ মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে রণাঙ্গনে জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন তারা অম্লান। সেই বীর সেনানিদের অসামান্য অবদান এবং পরিচিতি নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে স্থানীয়ভাবে কালিহাতী উপজেলায় নির্মিত হয়েছে ৩টি নাম স্মৃতিফলক।
উপজেলার পাইকড়ার ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামে ১৯৭১’র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নাম স্মৃতিফলক রয়েছে। ২০১১ সালের মার্চ মাসে গোলড়া মধ্যপাড়া তিনরাস্তার মোড়ে গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্মৃতিফলকটি নির্মিত হয়। ৬২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ৩৫ ইঞ্চি প্রস্থ বিশিষ্ট পাকা ভিত্তির উপর নির্মিত স্মৃতিফলকের উচ্চতা ৭২ ইঞ্চি, প্রস্থ ৩৪ ইঞ্চি এবং রং কালো। স্মৃতিফলকের তিনদিকে স্টীলের রেলিং দিয়ে নিরাপত্তা ঘের দেওয়া হয়েছে। স্মৃতিফলকের মাঝখানে সাদা টাইলসের উপর ক্রমান্বয়ে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম শোভা পাচ্ছে।
তাঁরা হচ্ছেন- শহীদ সাইদুল আলম খান ইয়াসিন, পিতা-মৌলভী মফেল আলী খান, শহীদ মোবারক হোসেন খান (সুজা খান), পিতা-মহফেল আলী খান, শহীদ আতিয়ার রহমান খান নুরু, পিতা- জিয়া উদ্দিন খান, শহীদ মীর আবু হানিফ সেলিম, পিতা-মীর আব্দুল হাকিম, শহীদ আব্দুল রশিদ খান, পিতা-কালু মামুদ, মশিউর রহমান খান, পিতা-মোফাক্ষর আলী খান, সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বীরপ্রতীক, পিতা-সৈয়দ ইউনুস আলী, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পিতা-সৈয়দ জওয়াহেরুল ইসলাম, সৈয়দ সরোয়ার আলম জজ, পিতা-সৈয়দ নুরুল হুদা, সৈয়দ হামিদুল হক লুলু, পিতা-সৈয়দ শফি উদ্দিন, খলিলুর রহমান খান পংকু, পিতা-জিয়া উদ্দিন খান, আব্দুস ছবুর বাদশা, পিতা-জবেদ আলী, শুকুর আহম্মেদ, পিতা-ফকির মামুদ, শেখ আব্দুল গফুর আরজু, পিতা-সাহেব আলী, আব্দুর রশিদ, পিতা-আব্দুল কদ্দুস মিয়া, আবুল কাশেম, পিতা-আব্দুর রহমান, জাফর সরকার, পিতা-জমত আলী সরকার।
গোলড়া গ্রামের সন্তান আবু রায়হান (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব) ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. আয়ুব খানের সহযোগীতায় সৈয়দ হামিদুল হক লুলু এবং সৈয়দ জাকির হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতিফলকটি নির্মিত হয়েছে।
উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের কুরুয়া গ্রামে সৈয়দা নূরজাহান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কুরুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাসমেত একটি অনিন্দ্যসুন্দর নামফলক রয়েছে। ২০১৩ সালের গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করা হয়। নামফলকটির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট ও ১১ ফুট প্রস্থ আংশিক ঢালু একটি ভিতের উপর নির্মিত। ভিতের মাঝখানে লাল সবুজের আল্পনাকৃত টাইলসের উপর স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র স্থাপন করা হয়েছে। ফলকের নিচে দুইদিকে পাথরের হ্যান্ড গ্রেনেড স্থাপন করা হয়েছে। ভিতের উত্তরপ্রান্ত ঘেঁষে নির্মিত নাম ফলকটির উচ্চতা সাড়ে ৮ফুট এবং প্রশস্তা ৬ফুট। ফলকের শীর্ঘভাগে দুইদিক থেকে দুইটি রাইফেল আড়াআড়িভাবে স্থাপন করা হয়েছে। রাইফেল দুইটির মাঝখানে খাঁড়াভাবে স্থাপন করা হয়েছে একটি বেয়নেট। নাম ফলকটির দুই পার্শ্বে ৭ জন করে ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি এবং মাঝখানে ১৫ মুক্তিযোদ্ধার নাম পাথরে খোদাই করা। নামফলকটি ষ্টিলের পাইপের রেলিং দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নামফলকটিতে উৎকীর্ণ ১৫ জন
মুক্তিযোদ্ধার নাম-
মৃত আবু হানিফা তালুকদার প¬াটুন কমান্ডার, আব্দুল হামিদ চৌধুরী, ইমান আলী তালুকদার, আব্দুল আজিজ তালুকদার, ইয়াকুব আলী তালুকদার, মরতুজ আলী, খলিলুর রহমান তালুকদার, আইয়ুব আলী তালুকদার, আঃ রহমান মীর আক্তার হোসেন, ওসমান গণি, মৃত আঃ আজিজ তালুকদার মৃত মালেক তালুকদার মৃত আবু সাইদ তালুকদার মৃত আঃ সালাম মিয়া ।
কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌরসভার ২৩নং ভাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব দক্ষিণ পাশে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল হাকিম তালুকদার স্মৃতিসংঘের উদ্যোগে এটি নির্মিত হয়। চারদিকে চকোলেট এবং মাঝখানে সাদা রং
এর স্মৃতিফলক দুইটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট, প্রস্থ্য ৩ ফুট। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্থ্য বিশিষ্ট পাকা মঞ্চের মাঝখানে শহীদ মিনার এবং দুইপাশে ২ টি নাম স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।
বামপাশের স্মৃতিফলকে স্থান পেয়েছেন ভাবলা গ্রামের ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা (মো: আ: হাকিম তালুকদার কোম্পানী কমান্ডার, হাজ্বী রহমত আলী তালুকদার, হাজ্বী আজহারুল ইসরাম মাষ্টার, মো: আ: কাদের তালুকদার, মো: সিরাজুর ইসলাম, মো: শাজাহান আলী মাষ্টার, মো: হযরত আলী সরকার, মো: নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী, মো: আব্দুল মজিদ তালুকদার, মো: আব্দুস ছামাদ আজাদ)।
ডানপাশের স্মৃতিফলকে স্থান পেয়েছেন হাকিমপুর গ্রামের ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা (মো: আমান উল্লাহ কোম্পানী কমান্ডার, মো: মকবুল হোসেন, মো: আব্দুস ছাত্তার, মো: আবুল হোসেন, মো; হযরত আলী, মো: কোরবান আলী, মো: ছোহরাব আলী, মো: আবুল কাশেম) ।
মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার বলেন মুক্তিযোদ্ধাগণ আমাদের এ দেশ এনে দিয়েছেন কিন্তু তারা একদিন জীবিত থাকবেন না। নাম স্মৃতিফলক নির্মাণের ফলে নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধাদের চিনতে পারবে, তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলকগুলো সচেতনতার সাথে নির্মাণ করা উচিত। যাতে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান না পায় এবং মজবুত করে নিমার্ণ করতে হবে যেন বেশি দিন টিকে থাকে।
কালিহাতী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান মজনু বলেন পর্যায়ক্রমে উপজেলার আরো অনেকস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হবে।
এই স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোক্তাদের দেশপ্রেমের বহিৃপ্রকাশকে অত্যন্ত সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধাগণ।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...