সখীপুরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা বিধবা ফাতেমা খাতুন (৬৪) তিন বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় হতে পাওয়া বীরনিবাসের চাবি পেলেও নির্জন স্থানে হওয়ায় বসবাস করতে পারেননি একদিনও। প্রতিমাসে ভাতা হিসেবে ১২ হাজার টাকা পেলেও ব্যাংক ঋণের টাকা কেটে নেওয়া হয় ১০ হাজার করে। এতে তিনি পরিবারের লোকজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমার স্বামী প্রায় ২৫ বছর আগে মারা যান। ফাতেমা খাতুনের নামে কোনো জমিজমা না থাকায় উপজেলা কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধের পাশেই পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সানবান্ধা এলাকায় বনের জমিতে এক ছেলে ও তিন মেয়ের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।
২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের নামে উপজেলায় ১৪টি পাকা বাড়ি নির্মাণের বরাদ্দ আসে। ‘বীরনিবাস’ নামে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফাতেমা খাতুনের বাড়ি বরাদ্দ এলেও ফাতেমার ছেলে নজরুলের ওই জমিতে ঘর নির্মাণ করার জন্য ফাতেমা প্রস্তাব দেন। ওই সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় জমি না থাকার অজুহাতে ফাতেমার ঘর বরাদ্দ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে কোনো উপায় না দেখে ফাতেমার বর্তমান বাড়ি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে বাপের বাড়ির জমিতে (ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া) চার শতক জমিতে নির্জন জঙ্গল জনবসতিবিহীণ স্থানে ওই বীরনিবাস নির্মাণ করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন আমার মতো আরও ১৪ মুক্তিযোদ্ধার হাতে বাড়ির চাবি তুলে দিলেও আমি ছাড়া সবাই নতুন বাড়িতে থাকছেন। তাঁর নামের ওই বীর নিবাসের পাশে একটি বাড়ি ঘরও নেই। নিস্তব্ধ ওই বাড়িতে একা বাস করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ছেলে ও তিন মেয়ের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর ধরে সখীপুর পৌরশহরের কোকিলা পাবর এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। তিনি বলেন-আমার বয়স ৬৪ বছর। সারা বছরই অসুখ-বিসুখে ভুগছি। ওই নির্জন বাড়িতে আমার একা থাকা কখনই সম্ভব হবে না।
মাসিক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বছর খানেক আগে ছেলে নজরুল ইসলামকে বিদেশ পাঠাতে ওই ভাতার বিপরীতে তিন লাখ টাকা ঋণ নেই। প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা ভাতা পেলেও ঋণ বাবদ প্রতিমাসেই ১০ হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। ওষুধপত্র কেনার পর ভাতার এক টাকাও আর হাতে থাকে না। ছেলেটাও সুযোগ সুবিধা না পেয়ে বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে। অভাবেই চলছে আমার সংসার। তিনি দুঃখ করে বলেন-সরকার বাড়ি দিয়েছে অথচ থাকতে পারি না, আবার ভাতা পেলেও ঋণের কারণে সেই ভাতাও খেতে পারছি না।
মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুন তাঁর জন্য নির্মিত বীরনিবাসে না থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুর রহমান।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...