কাগজপত্র জাল করে দলিল রেজিস্ট্রি, ১১জনের নামে মামলা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি চক্র জমির পর্চা, খাজনার দাখিলা ও ওয়ারিশান সনদ জাল করে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমির পাওয়ার নামা দলিল সৃষ্টি করে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন।  চক্রটি ওই দলিল মূলে জমিতে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এঘটনায় তাসমুবা খানম বেলি নামে এক নারী (জমির প্রকৃত মালিক দাবিদার) বাদী হয়ে দলিল লেখকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে এক একর জমির পাওয়ার নামা দলিল তৈরি করা হয়েছে উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার মমিন নগর মৌজার। 

এদিকে মির্জাপুর উপজেলা ভূমি অফিসকে ঘিরে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে জমির পর্চা, খাজনার দাখিলা ও ওয়ারিশান সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল তৈরি করে দলিল সৃষ্টি করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

মামলার অভিযোগে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরের আকুর টাকুর মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা শামস্ উদ্দিনের স্ত্রী তাসমুবা খানম বেলি তার অপর তিন বোন নাসরিন খানম এনি, ছালমা খানম মেরী ও তানিয়া খানম এলি পৈত্রিক সূত্রে মালিক হয়ে গোড়াই মমিননগর মৌজার সিএস ৫৩৫, এসএ ৯২৩ ডিপি ১৯৭১ পুরাতন ১৬৬৫, ২৯০৪, ২৯০৫, ২৯০৭, ২৯৬৫, ২৯০২ ও হাল ৮১১৩, ৫৩৬৮, ৪৩৬৯, ৪৩৭৬, ৪৩৭৮, ৪৩৮৫ নং দাগের ৪১২ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। 

গোড়াই এলাকার বাসিন্দা আবু আহাদ খান পিন্টু, একই এলাকার আজগর আলী, উথান খান, শহিদুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, মির্জাপুর পৌরসভার বংশাই রোড এলাকার জিয়াউর রহমান, বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের মো. মজনু মিয়া, দলিল লেখক ইকবাল হোসেন, রশিদ দেওহাটা গ্রামের মোস্তফা মিয়া, মির্জাপুর পৌর এলাকার বাইমহাটি গ্রামের সোহেল রানা, সরিাদাইড় গ্রামের মোজাম্মেল হক, পরস্পর যোগসাজসে উল্লেখিত দাগের জমির পর্চা, খাজনার দাখিলা ও ওয়ারিশান সনদ জাল করে গত ২৭ জানুয়ারি মির্জাপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ৫৮৭ নং পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিলের মাধ্যমে উল্লেখিত দাগের এক একর জমির পাওয়ার নামা দলিল সৃষ্টি করে। 

জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে জমির মূল মালিকের সত্ব হরণ করে মামলার ১নং আসামী আবু আহাদ খান পিন্টু দাতা সেজে এবং মো. মজনু মিয়া, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও সোহেল রানা গ্রহীতা হয়ে ওই দলিল সৃষ্টি করে রেজিস্ট্রে করেন।  

পরে তারা ওই দলিল মূলে তাসমুবা খানম গংদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪১২ শতাংশ জমির মধ্যে এক একর জমি দখলের চেষ্টা চালায় বলে গত ২২মে আদালতে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই টাঙ্গাইলকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পিবিআই প্রতিবেদন জমা দিলে বিচারক আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারী করে ১৯ নভেম্বর স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। 

মামলার আসামী মো. মজনু মিয়া বলেন, আমরা পাওয়ার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করতে দলিল লেখককে শুধু এসএ পর্চা দিয়েছি। তিনি কিভাবে জমির পর্চা, খাজনার দাখিলা ও ওয়ারিশান সনদ ব্যবস্থা করেছেন তা আমরা জানিনা। কোন সূত্রে পাওয়ার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন জানতে চাইলে বলেন, গোড়াই এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের নামে পাওয়ার নামা রেজিস্ট্রি দলিল করেছি। তবে ওই জমি দাতা আবু আহাদ খান পিন্টুর দখলে নেই বলে জানান।   

দলিল লেখক ইকবাল হোসেন বলেন, দাতা জমির কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি শুধু সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করেছি। 
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মঈনুল হক ও সাব-রেজিষ্টার মোজাহারুল ইসলাম সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক বলেন, জমি রেজিস্ট্রি করার আগে সাব-রেজিস্ট্রারের জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে দেখা উচিত ছিল। এছাড়া বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।