টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ভ্যান চুরির ঘটনায় চোরকে সারারাত আটকিয়ে রেখে গ্রাম্য সালিশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরআগে চোরকে স্কুল ঘরে পাহাড়া দেয়ার অস্বীকৃতি ইউপি সদস্য গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ তার ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মারধরের শিকার গ্রাম পুলিশ সদস্য গনেশ দাস এই ঘটনায় ভূঞাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের বাসিন্দা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়ার মোল্লার মোড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গ্রাম্য সালিশে চোরকে জুটাপেটা করে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ আগস্ট গোবিন্দাসীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনায় অংশগ্রহন করার জন্য সাইদুল নামের ভ্যান চালক কয়েড়া এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা গফুরের বাড়িতে অটোভ্যান রেখে যান। পরে তিনি অনুষ্ঠান শেষ করে গিয়ে দেখেন তার ভ্যানগাড়ি সেখানে নেই। এরপরই ভ্যানগাড়ি উদ্ধারে চেষ্টা করার পর জানতে পারেন পাশের বাড়ির কাদেরের ছেলে জহুরুল ইসলাম চোরচক্রের সহায়তায় সেখান থেকে দিনে দুপুরে ভ্যানটি চুরি করেন। পরে স্থানীয়রা বুধবার সন্ধ্যার দিকে ভ্যান চোর জহুরুলকে আটক করে ইউপি সদস্যের কাছে সোপর্দ করে। এরআগে ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। পরে ইউপি সদস্য কয়েড়া প্রাইমারি বিদ্যালয়ে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। পরে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ গনেশ দাসকে চোরকে পাহাড়ায় নিযুক্ত করেন। কিন্তু গনেশ রাতে একা পাহাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউপি সদস্য রুবেল তার লোকজন নিয়ে লাঞ্চিত ও মারধর করেন। এসময় তার ছেলে হৃদয়কেও মারধর করা হয়।
এদিকে গেল ৬মাসে কয়েড়া পূর্ব পাড়া থেকে ৮-১০টি ভ্যান চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার একটি ভ্যান এখনও উদ্ধার হয়নি।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য গনেশ দাস বলেন, সারাদিন ইউএনও স্যার ও চেয়ারম্যানের সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। সন্ধ্যার দিকে এলাকার যাওয়ার পর মেম্বার রুবেল ভ্যান চোরকে রাতে পাহাড়া দেয়ার কথা বলেন। এসময় পাহাড়া দেয়ার জন্য সাথে কয়েকজনকে থাকার কথা জানাই মেম্বারকে। এছাড়া চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে পাহাড়ার কথা বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মেম্বার বলেন তুই পাহাড়া দিবি তোর বাপ পাহাড়া দিবে। পরে পাহাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেম্বারসহ তার লোকজন আমাকেসহ ছেলেকে মারধর করে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
ভ্যান চোরের সালিশে থাকা কয়েড়ার ৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বাবু বলেন, গ্রাম্যভাবে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। চোরের আত্মীয় স্বজন চোর জহুরুলকে জুতাপেটা করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও গরু চুরির অভিযোগ ছিল। তার সাথে থাকা বাকি চোরদের বের করার চেষ্টা চলছে।
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরফানকে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার কথা জানায়। পরে গ্রামের গণ্যমান্য লোকজনের মাধ্যমে সালিশি বৈঠক করা হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক চোরকে তার স্বজনরা সকলের সামনে জুতাপেটা করে নিয়ে যায়। তবে গ্রাম পুলিশ সদস্য গনেশকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। ওই দফাদারকে পাহাড়া দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
এই বিষয়ে গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদারের বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ঘটনার বিষয়ে জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...