মাত্র ২৬ বছর বয়সেই টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল ইসলাম রকি হায়দার। ১৩৩ বছরের প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সর্ব কনিষ্ট নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। তৃতীয় ধাপে গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাচনে ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন রকি। নুরুল ইসলাম রকি হায়দার ১৬৪৩ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ও দুইবারের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী (৬০) পান ১৫৯৩ ভোট। দুইবারের কাউন্সিলর আর বয়সে দ্বিগুণ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েও ৫০ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন এ প্রার্থী। তরুণ এ প্রার্থীর বিজয়ে আনন্দিত সমর্থকরা।
জানা যায়, ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ১৯৮৯ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতি হয়। ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৪২৫জন। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৩৩৪ জন পুরুষ ও ৬৪ হাজার ৯১ জন নারী। টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে ৩জন মেয়র, ৩৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আর ১০০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এর মধ্যে সন্তোষ, বালুচড়া, পুরাতন পাড়া, ঘোষপাড়া, কাগমারী, অলোয়া ভবানী ও মাদার খোল নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৬৩৯৩জন। গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে এ ওয়ার্ডে ভোট দিয়েছেন ৪৯৮১জন ভোটার। এর মধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডের উট পাখি প্রতীকের প্রার্থী মো.নরুল ইসলাম রকি হায়দার ১ হাজার ৬শ ৪৩ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ডালিম প্রতীকের প্রার্থী ও দুইবারের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ১ হাজার ৫ শ ৯৩ ভোট। পাঞ্জাবি প্রতীকের প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১৫০৯ আর পানির বোতল প্রতীকের প্রার্থী সুজিত সরকার পান ১৫৮ ভোট।
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রতিদ্বন্দ্বি ও নির্বাচিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ট কাউন্সিলর মো.নরুল ইসলাম রকি হায়দার।
বিজয়ী কাউন্সিলর সমর্থক ও সন্তোষ রথখোলা এলাকার ভোটার মো. ফরিদ হোসেন (৩০) বলেন, করোনা চলাকালে জনকল্যাণে রকি হায়দারের এগিয়ে আসাই ছিল তাদের কাছে লক্ষ্যনিয়। এ সময় ওয়ার্ডের গরীব দুঃখী মানুষকে ব্যক্তি উদ্যোগে দেয়া চাল, ডাল, আটা ও টাকা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করার মনোভাব দেখে আমরা যুবসমাজ তাকে সমর্থন দিয়েছি। ভবিষ্যতেও সে এই ওয়ার্ডবাসীর কল্যাণে কাজ করবে এমনটাই আশা করেন তিনি।
সন্তোষ রথখোলা এলাকার প্রবীণ ভোটার লাল মাহমুদ (৮০) বলেন, রকি হায়দার একজন ভালো ও সৎ ছেলে। এ কারণে এত অল্প বয়সী একজন প্রার্থীকে আমরা ভোট দিয়ে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছি।
সন্তোষ পুরাতন পাড়ার ভোটার আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) বলেন, রকি হায়দারের বাবা মরহুম সেলিম হায়দার ২০১০ সাল থেকে ২০১৫সাল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এ কারণে তার ছেলে রকি হায়দারকে আমরা সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করেছি।
সন্তোষ ঘোষপাড়া এলাকার ভোটার নরেশ চন্দ্র ঘোষ (৫৮) বলেন, রকি খুব ভালো ছেলে। এলাকার যুবসমাজের বন্ধু। যুবসমাজের দাবিতে আমরা রকি হায়দারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। আশা রাখি সে আমাদের ভোটের মর্যাদা রাখবে। ভবিষ্যতেও সে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
বিজয়ী কাউন্সিলর মো.নরুল ইসলাম রকি হায়দার (২৬) বলেন, আমার বাবা মরহুম সেলিম হায়দার এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। খুব কাছ থেকে আমি আমার বাবার কাজ দেখেছি। দেখেছি কিভাবে জনগণের খেদমত করতে হয়, কিভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা গুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। এ কারণে আমার বিশ্বাস আমি পারবো ভোটারদের খেদমত করতে।
প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি রয়েছে কিছু স্মার্ট আইডিয়া। এ ওয়ার্ডবাসির চিকিৎসা সুবিদার্থে আমি আমার ব্যক্তিগত টাকায় একটি এ্যাম্বুলেন্স কিনবো। যার মাধ্যমে ও বিনা পয়সা এ ওয়ার্ডের অসুস্থ নাগরিকগণ চিকিৎসা সেবার সুবিধা ভোগ করবেন। এ সেবার স্বার্থে ওয়ার্ডের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে হটলাইন থাকবে, ওই হটলাইনের মাধ্যমে যদি কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন তার পরিবার যোগাযোগ করতে পারবেন। সংবাদ পাওয়া মাত্রই রোগীকে টাঙ্গাইল হাসপাতাল অথবা ঢাকায় পৌঁছে দেবে ওই এ্যাম্বুলেন্স। এছাড়াও ওয়ার্ডের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ওয়াইফাই সংযোগ দিব, যার মাধ্যমে মানুষ তার জরুরী কাজ গুলো সেঁড়ে নিতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ডের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদক বেচাকেনা। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে চিহ্নিত সেই সকল স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার ইচ্ছাও রয়েছে তার। এছাড়াও রয়েছে ওয়ার্ডের মাদকাসক্ত যুবকদের নিজস্ব অর্থায়নে সুচিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা।
গত ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত মো.নরুল ইসলাম রকি হায়দার সর্বকনিষ্ট কাউন্সিলর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ.এইচ.এম কামরুল হাসান।
২৫ বছর বয়স হলেই যে কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...