ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়কের চারাবাড়ি ঘাট সেতুর বাম তীরের অ্যাপ্রোচ ধসে পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যানচলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে এ সেতুতে যানচলাচল বন্ধ করেছেন স্থানীয়রা। এর ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়াও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে সেতুটি।
জানা যায়, প্রতিদিন টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের কাতুলী, হুগড়া, কাকুয়া, মাহমুদনগর আর নাগরপুরের ভাড়রা ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে। সাম্প্রতিক নদীর প্রবল স্রোত আর গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্রীজের অ্যাপ্রোচে ধস দেখা দেয়। এর মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে যান চলাচল করলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। এরপরও সেতুর অ্যাপ্রোচ ধস রোধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
অপরদিকে সেতুর ওপারের ঘোষপাড়ায় দেখা দিয়েছে নদীর তীব্র ভাঙ্গন। ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এতেও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না হওয়ায় নতুন করে আরো দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে।
সরেজমিনে ৩০-৪০জন শ্রমিককে জিও ব্যাগে মাটি ভরে ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলার জন্য কাজ করতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছর জুড়ে এ সেতুর পাশে থেকে অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেন প্রভাবশালীরা। এ কারণেই বর্ষা এলে সেতুটির আশেপাশে ভাঙন দেখা দেয়। মাঝে মধ্যে প্রশাসন এসে বালু উত্তোলন বন্ধ করলেও রহস্যজনক কারণে কয়েকদিন পরেই আবার শুরু হয় বালু উত্তোলন। যার ফলে ভাঙনের এই ভোগান্তি আমাদের সহ্য করতে হয়। সেতু সংস্কারের আগে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান তারা।
সিএনজি চালক শাহিন বলেন, গত দুই একদিন ঝুঁকি নিয়ে ব্রীজের ওপার যাত্রী আনা নেয়া হলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছেনা। সেতুটির নীচের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ যে কোন সময় ব্রীজটি ভেঙ্গে যেতে পারে। দ্রুত ব্রীজটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দ্রুত সেতুটি সংস্কার না হলে আমরা না খেয়ে মারা যাব। এমনিই করোনার ভয়ে যাত্রী কম, আবার শুরু হয়েছে বন্যা। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।
কাতুলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নায়েব আলী সরকার বলেন, ভাঙ্গন শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন এমপি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনি বলেন, সেতুর অ্যাপ্রোচে ধস শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছি আশা করছি দ্রুতই তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন,অ্যাপ্রোচে ধস শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনি ছানোয়ার হোসেন এমপি ও এলজিইডিকে বিষয়টি জানান। এমপি মহাদয় সেতুর অ্যাপ্রোচ ধস রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। এলজিইডি দ্রুত কাজ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সেতুর অ্যাপ্রোচে দেখা দেয়া ধসের এখন স্থায়ী সংস্কার সম্ভব নয়। তবে সেতুতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী ভিত্তিতে মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো.ছানোয়ার হোসেন বলেন, চারাবাড়ি সেতুর অ্যাপ্রোচে ধসসহ ঘোষ পাড়ার নদীর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলজিইডি আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীদের দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে ঘোষ পাড়ার নদীর ভাঙ্গন রোধে তিন হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এছাড়াও দ্রুতই ভাঙন কবলিত সেতুটির সংস্কার হবে বলেও জানান তিনি।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...