করোনাভাইরাস ও ঘুর্ণিঝড় আম্পানের মধ্যেই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই ইঞ্জিন চালিত ছোট ছোট নৌকায় যমুনা নদী পাড়ি দিচ্ছে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষজন। তবে ঝুঁিক নিয়ে নদী পাড় হওয়া বন্ধে পুলিশের কোন উদ্যোগই দেখা যায়নি। উল্টো তারা দাবি করেছে কেউ পাড় হচ্ছে না।
বুধবার (২০ মে ) ভোর থেকেই ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ফেরত এসব মানুষজনকে বিভিন্ন মাধ্যমে যমুনা নদীর ঘাটে আসতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব সংলগ্ন কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া যমুনা নদী ঘাট ও ভুঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য মানুষজন ঢাকা, চন্দ্রা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে ঘাটে নদী পাড় হতে। তবে ঝুঁিক নিয়ে নদী পাড় হওয়া আটকাতে পুলিশের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব হারবার পয়েন্টের কাছে সেতু কর্তৃপক্ষের তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নদী পাড় হওয়ার জন্য আসা মানুষজনকে ঘাটের দিকে যাওয়ার জন্য সিগনাল দিচ্ছেন। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী এসব মানুষজন ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা, সিএনজি ও ভ্যানে করে সেতুপূর্ব বেলটিয়া যমুনা ঘাটে যাচ্ছে। সেখান থেকে ইঞ্জিত চালিত ছোট ছোট নৌকাযোগে জনপ্রতি ১শ টাকা ভাড়া দিয়ে যমুনা নদী পাড় হচ্ছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্বরে পুলিশের টহল দেখা গেলেও নৌকাযোগে পারাপার বন্ধে তাদের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষজন নৌকাযোগে নদী পাড় হচ্ছিল। এতে নৌকাটি মাঝ নদীতে যাওয়ার পর ডুবে যায়। পরে নারী ও শিশুসহ তিনজন নিখোঁজ হয়। নদীতে উদ্ধার অভিযানে নেমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা বগুড়া জেলার বাসিন্দা ছিল।
এঘটনার রেস কাটতে না কাটতেই আবারো ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও করোনাভাইরাসের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকাযোগে নদী পাড়ি দিচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। আর এই সুযোগে ঘাটের নৌকার মাঝিরা পাচঁগুন ভাড়া নিয়ে লোকজনকে নদী পাড় করছেন। এতে দূর্ঘটনার পাশাপাশি হতাহতেরও আশঙ্কা রয়েছে। মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হলেও তা বন্ধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা ও সেতুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি।
ঢাকা ফেরত পঞ্চগড়গামী ফারুক বলেন, কাজ নেই। টাকাও নেই যে থাকবো। তাই বাড়ি যাচ্ছি ঝুঁকি নিয়েই।
নদী পাড় হওয়া বগুড়াগামী মাইনুল হোসেন বলেন, মহাসড়কে পরিবহণ বন্ধ তাই বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব বেলটিয়া যমুনা নদীর ঘাটে আসি। এখান থেকে ১০০টাকা দিয়ে যমুনা নদী পাড় করে দেয়ার কথা থাকলেও তারা মাঝ নদীর চরে নামিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে পুনরায় ৫০টাকা দিয়ে আবার নৌকাযোগে সেতুপশ্চিমপাড়ের বিদ্যুতের পাওয়ার স্টেশনের কাছে গিয়ে নামতে হয়।
কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া গ্রামের ফারুক আহমেদ বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এসে নদী পাড় হচ্ছে। এতে এলাকাবাসী ঝুঁকি রয়েছে। অথচ পুলিশের সামনে দিয়ে লোকজনগুলো দলে দলে আসলেও তারা সেটি বন্ধ করেনি। মানুষজন সিএনজি, অটোরিক্সা ও ভ্যানে করে যমুনা নদীর বেলটিয়া ঘাটে আসছে। ভোর থেকে শুরু হয় নদী পাড়াপাড়।
একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী কয়েক হাজার মানুষ নদী পাড় হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেই নৌকার মাঝিরা মানুষ পাড় করছে।
ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আলআমিন জানান, মহাসড়ক দিয়ে লোকজন ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও পায়ে হেঁটে নৌঘাটে ভিড় জমাচ্ছে নদী পাড় হওয়ার জন্য। ঘাট এলাকায় পুলিশের টিম কাজ করছে যাতে কেউ নৌঘাটে ভিড় জমাতে বা নদী পাড় না হতে পারে ।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এমএ আব্দুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব এলাকার যমুনা নদীতে পুলিশের টহল রয়েছে। কেউ যাতে ঝুঁিক নিয়ে নদী পাড় না হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব বেলটিয়া ঘাটে পুলিশের টিম কাজ করছে। কেউ নৌকাযোগে নদী পাড় হয়নি। কাউকে পার হতে দেয়া হচ্ছে না।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...