হে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা,
জীবনের শুরুতেই এক নজিরবিহীন অভিজ্ঞতা হলো তোমাদের। নিয়মিত স্কুল নেই, বাইরে বেড়ানো নেই, পার্কে ঘোরাঘুরি নেই, এমনকি কেনাকাটার জন্য দোকানেও যাওয়া যাচ্ছে না। আরও দু:সহ হলো প্রিয়জনদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে না। এই অভিজ্ঞতা শুধু তোমাদের কেনো এখনো বেঁচে আছেন এমন কারও নেই। এমনকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এমন অবরুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
হে সুন্দর আগামী,
এ ব্যর্থতা আমাদের। তোমাদের জন্য নির্মল আকাশ, দূষণমুক্ত বায়ু আর বিশুদ্ধ জল আমরা উপহার দিতে পারিনি। যে বয়সে তোমরা সুনীল আকাশে মেঘ আর পাখিদের ওড়াওড়ি দেখবে সে বয়সে আমরা তোমাদেরকে চার দেয়ালে মাঝে আবদ্ধ করে ফেলেছি। সীমাহীন লোভ আর অর্থলিপ্সার কারণে আমরা আকাশ, বাতাস, নদী, সাগর, মহাসাগর দূষিত করে ফেলেছি। প্রকৃতি এই অত্যাচার-অনাচার সহ্য করবে কেনো? তাইতো সে এমন বিরূপ আচরণ করছে।
হে আগামী দিনের সারথী,
তোমরা নিশ্চই জানতে পেরেছ যে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন মানবিক বিপর্যয় আর ঘটেনি যখন পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে আছে। যখন চোখের সামনে একে একে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে আমাদের প্রিয়জন। অথচ আমরা অসহায়। তাদেরকে শেষ বিদায় জানানোর জন্যও আমরা সমাধিস্থলে যেতে পারছিনা। পৃথিবী ইতোমধ্যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে। দেখেছে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো কী নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করেছে। আজ সেইসব শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অন্যদের হত্যা করবে তো দূরের কথা নিজ দেশের নাগরিকদেরও রক্ষা করতে পারছেনা। ‘করোনা’ নামে একটি অদৃশ্য শত্রুর কাছে তারা কতো অসহায়!
হে চির সুন্দর,
তোমরা করোনা-উত্তর এক নতুন পৃথিবী দেখবে। সেই পৃথিবী কেমন হবে আমরা জানিনা। তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, শিল্পিত মন-মনন-মেধা দিয়ে সেই পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাবে। মনে রেখো, আমরা লোভে পড়ে এই সুন্দর পৃথিবীর যে ক্ষতি করেছি তা তোমরা করবে না। প্রকৃতিকে নির্বিচারে নৃশংসভাবে ধ্বংস করে আমরা যে বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করেছি তোমরা তা করবে না। আমরা নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেভাবে লুটপাট করেছি তোমরা তা করবে না।
হে নতুন পৃথিবীর নাগরিক,
তোমাদের সামনে নতুন দিন। তোমরা যৌবনে পা রেখেই এক পরিবর্তিত পৃথিবীর নেতৃত্ব হাতে পাবে। আমরা আশা করি সেই পৃথিবীতে লোভ-হিংসা-ঘৃণা- বৈষম্য থাকবেনা। জীবনের শুরুতেই মানবজাতির যে করুণ পরিণতি তোমরা দেখলে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য তোমরা সম্ভব সবকিছুই করবে। আমাদের যা কিছু কুৎসিত-কদর্য তা তোমরা বর্জন করবে। প্রকৃতির কাছে আমাদের যে সীমাহীন দায় তা তোমরা পুষিয়ে দিবে। কখনো ভুলে যাবে না, আামাদের অপরিনামদর্শীতার কারণে এই পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য আর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক প্রাণ বিধ্বংসী জীবাণু। আমরা তার নাম দিয়েছি ’করোনা’। এই ভাইরাস একদিন প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়তো চলে যাবে। আর আমাদের জন্য রেখে যাবে এক নতুন পৃথিবী। তোমরা হবে সেই পৃথিবীর কারিগর। তোমরা নিজের মতো করে সাজাবে সেই পৃথিবী। তোমরা সুন্দর থাকবে আর আমাদের ক্ষমা করে দিবে।
তোমাদের অসীম কল্যাণ কামনায়।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন,
প্রধান শিক্ষক, উইজডম ভ্যালি, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...