টাঙ্গাইলের সখীপুরে মহা ধুম-ধামে জমে উঠেছে আধ্যাত্বিক সাধকদের প্রাণের উৎসব ফাইল্যা পাগলার মেলার ৬৯তম আসর। মেলা প্রাঙ্গনের চারপাশ ছাপিয়ে মেলার পরিধি গিয়ে ঠেকেছে পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় এসে জড়ো হয়েছেন আধ্যাত্বিক সাধক, বাউল কবি, ভক্ত আশেকানরা। মেলায় বাহারী পশরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দোকানিরা। দলে দলে হাজার মানুষ আসছেন মেলা দেখতে ও তাদের মানত পূরণ করতে।
প্রতিদিন জবাই হচ্ছে গরু, মহিষ, ছাগল, মুরগীসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু। দর্শনার্থী আর ভক্তদের পদচারনায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গনসহ পুরো দাড়িয়াপুরগ্রাম।
এলাকাবাসী ও ভক্ত আশেকানদের সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘ সময় ব্যাপী এ মেলা পৌষ মাসের পূর্ণিমার রাত থেকে তিন দিন মূল মেলা হলেও পৌষ মাসের প্রথমদিন থেকে শুরু হয়ে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত থাকে এর লোকসমাগম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় এসে জড়ো হতে থাকেন আধ্যাত্বিক সাধক, বাউল কবি, ভক্ত আশেকানরা।
এছাড়া বাহারী পশরা সাজিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দোকানিরা। সারাদেশ থেকে দলে দলে হাজার মানুষ মেলা দেখতে ও তাদের মানত পূরণ করতে জমায়েত হন এ মেলায়। এখানে ভক্ত আশেকানরা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, মুরগ- মুরগীসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু জবাই করে পাক করে প্রথমে মাজারে পরে নিজেরা খান। হেল ফাইলা- হেল ফাইলা, ফাইলা নাচেনাতো আমি নাচি এ শব্দে আর ভক্তদেরপদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গনসহ দাড়িয়াপুর, কৈয়ামধু,দেওবাড়ি গ্রামসহ আশপাশ।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মানুষ তাদের রোগ, ব্যাধি, অভাব অনটন, দুর্দশাসহ বিভিন্ন উপলক্ষে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, মুরগী মানত করে থাকেন ফালু চাঁন শাহ্’র দরবারে। আর মানত পালন করতেই বছরের এই নির্দিষ্ট সময় তারা মেলায় এসে পশু জবাই করে থাকেন। মেলার চারপাশে গরু, ছাগল,মুরগী জবাই করতে ও রান্না করে খেতে দেখা যায়। এভাবেই ধীরে ধীরে জমে উঠে মেলা।
এই মেলা নিয়ে দাড়িয়াপুর গ্রামের মানুষ ও দর্শনার্থীদের মধ্যে যেমন রয়েছে উৎসাহ উদ্দিপনা তেমনি রয়েছে ক্ষেদও। মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো দাড়িয়াপুর গ্রামের পরিবেশ মানুষের মল-মূত্র, পশুর বৃষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ঠাংশের গন্ধে পুরো এলাকার বায়ূ দূষিত হয়ে পড়ে। পশু জবাই করা, পশুর বৃষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ঠাংশ ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকা ও যত্রতত্র মলমুত্র ত্যাগ করার ফলে পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। এলাকাবাসী পশু জবাই করাও বৃষ্ঠা, উচ্ছিষ্টাংশ ফেলার নির্দিষ্ট স্থান ও ভ্রাম্যমান টয়লেট স্থাপনের দাবী জানান।
এ মেলা প্রসঙ্গে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেলা কমিটির উদযাপন কমিটির সভাপতি দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাইফুল ইসলাম বলেন, মেলায় এলাকাবাসীর সমন্বয়ে আগত দর্শনার্থী ও ভক্তদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং পশু জবাই করার নির্দিষ্ট স্থান না থাকলেও ভ্রাম্যমান টয়লেট ও স্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমির হোসেন বলেন, মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সখীপুর থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েত করা হয়েছে। এছাড়াও কন্ট্রোলরুম থেকে পুরো মেলা সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত; ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের নির্জন এলাকায় এসে আস্তানা নির্মান করেন আধ্যাত্বিক সাধক ফালু চাঁন শাহ্। ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই সাধক দেহত্যাগ করেন। তারপর থেকে ১৯৫০ সালের পৌষ মাসের পূর্নিমার দিন থেকে তিন দিন মেলা উদযাপন করা শুরু করেন তাঁর ভক্ত ও এলাকাবাসী। ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারী মেলা প্রাঙ্গনে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরনে ৭ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। ভয়াবহ এ হামলার পর থেকে কয়েক বছর মেলায় লোক সমাগম কম হলেও ধীরে আবার পুরোদমে জমতে শুরু করে ঔতিহ্যবাহী ফাইল্যা ফাগলার মেলা।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...