০৬:০৪ এএম | টাঙ্গাইল, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

ভাষা আন্দোলনেও গৌরবময় টাঙ্গাইল

 ১৮৮২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

কাজল আর্য | টাঙ্গাইল২৪.কম | রোববার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | |
, টাঙ্গাইল :

পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালী জাতিই মাতৃভাষার জন্য আত্মদান দিয়েছে। ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলভিত ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারী শুধু আমার বা আমাদের বাঙালীর অহংকার নয়। এখন পুরো বিশে^র অধিকার আদায়ের পথ প্রদর্শকও। যার স্বীকৃতি ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে যেমন টাঙ্গাইলে বীরত্বগাথা ইতিহাস রয়েছে। তেমনি ৫২ এর ভাষা আন্দোলনেও রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। টাঙ্গাইলের অনেক বীর সন্তান ভাষা আন্দোলনে জাতীয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মরহম মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অগ্রভাবে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া আবদুল মান্নান (প্রয়াত), ড. মফিজ উদ্দিন আহমদ (প্রয়াত), ডা. মির্জা মাজহারুল ইসলাম (জীবিত), বেগম ফজিলাতুন্নেছা (প্রয়াত), সোফিয়া খান (প্রয়াত), সাইয়িদ আতিকুল্লাহ (প্রয়াত) ও আব্দুস সালাম (প্রয়াত) উল্লেখযোগ্য। তাদের অনেকেই আন্দোলন করতে গিয়ে জেল জুলুম ভোগ করেছেন।

এদিকে ভাষা আন্দোলনের সময়ে টাঙ্গাইলেও গড়ে উঠেছিল দুর্বার আন্দোলন। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদিউজ্জামান খান (প্রয়াত), সৈয়দ আবদুল মতিন (প্রয়াত), সৈয়দ নুরুল হুদা (প্রয়াত), শামসুর রহমান খান শাজাহান (প্রয়াত), মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (প্রয়াত). আবু সাঈদ খান (প্রয়াত), হাতেম আলী তালুকদার (প্রয়াত), রমিনুজ্জামান রইজ (প্রয়াত), নারায়ন চন্দ্র বিশ^াস (প্রয়াত). ঋষিকেশ পোদ্দার (প্রয়াত), হাবিবুর রহমান (প্রয়াত), বুলবুল খান মাহবুব ও হাসিনা হক (জীবিত), নাজমি আরা রুবি (প্রয়াত), আলী আকবর খান খোকা (প্রয়াত), হেকমত আলী মিয়া (প্রয়াত), রোকেয়া রহমান (প্রয়াত) প্রমুখ। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে তৎকালীন রমেশ হলের নিকটে (বর্তমানে সাধারণ পাঠাগারের পশ্চিমপাশে) তারা টাঙ্গাইলে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ৩য় সংস্করণের রুপ। শুধু টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয় উপজেলা সদরের শহীদ মিনারগুলো বিভিন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠানের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনে টাঙ্গাইলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও জেলার ২৫৬১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৮২ টিতেই নেই শহীদ মিনার। এতে দেশপ্রেম ও বাঙ্গালির চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ভাষা সৈনিকসহ অনেকেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলার মোট ১৬২৩ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩২৯ টিতেই শহীদ মিনার নেই। এরমধ্যে ঘাটাইলের ১৭৩টির মধ্যে ১৪টিতে, সখিপুরে ১৪৭ টির মধ্যে ৭৬টিতে, গোপালপুরে ১৫৯টির মধ্যে ৮টিতে, বাসাইলে ৭৯ টির মধ্যে ৮ টিতে, টাঙ্গাইল সদরের ১৬৪ টির মধ্যে ১৭ টিতে, দেলদুয়ারের ১০০ টির মধ্যে ৮ টিতে, মির্জাপুরে ১৭০ টির মধ্যে ৪৫ টিতে, কালিহাতীর ১৭০ টির মধ্যে ৩০ টিতে, মধুপুরে ১১০ টির মধ্যে ২৮ টিতে, নাগরপুরে ১৫৬ টির মধ্যে ১৫ টিতে, ভূঞাপুরে ১১০ টির মধ্যে ২১ টিতে এবং ধনবাড়ীর ৮৫ টির মধ্যে ২৪ টিতে মোট ২৯৪ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকে না। তবুও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় উদ্যোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সারা জেলায  ১৬১টি বিদ্যালয়ে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র সখিপুর উপজেলায়ই ৭০টি নতুন শহীদ মিন্ার নির্মাণ করা হয়েছে। 

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে ৯৩৮ টি হাইস্কুল, কলেজ, কারিগরি, এবতেদায়ী ও মাদ্রাসা রয়েছে। এরমধ্যে ৫৫৩ টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। অফিস সূত্রে জানা যায় টাঙ্গাইল সদরের ১০৪ টির মধ্যে ১৭ টিতে, বাসাইলের ৪২ টির মধ্যে ১৫ টিতে, কালিহাতীর ৮৭ টির মধ্যে ৫২ টিতে, সখিপুরের ১০১ টির মধ্যে ২৭ টিতে, ঘাটাইলের ১১৫ টির মধ্যে ৩৮ টিতে, গোপালপুরের ৮৪ টির মধ্যে ৪৩ টিতে, মধুপুরের ৭৭ টির মধ্যে ৩২ টিতে, ধনবাড়ীর ৬৬ টির মধ্যে ২৬ টিতে, মির্জাপুরের ৭৬ টির মধ্যে ৫০ টিতে, দেলদুয়ারের ৩৮ টির মধ্যে ২৩ টিতে, নাগরপুরের ৭৭ টির মধ্যে ৩৭ টিতে ও ভূঞাপুরের ৭১ টির মধ্যে ২৫ টিতে মোট ৩৮৫ টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনারের প্রয়োজন। শুভ দিক হলো মাদ্রাসাগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ৬ টি উপজেলায় ১২ টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে।

এবিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান ডাঃ মির্জা মাজহারুল ইসলাম (৯৩) বলেন, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশের অন্যতম স্থান টাঙ্গাইল। জেলার এতোগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার কেন নেই ? এটা অত্যন্ত লজ্জার ও হতাশাজনক। এতে আমাদের দেশপ্রেম ও বাঙালীর চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ। আইন করে হলেও মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন শহীদ মিনার আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাঙ্গালীর চেতনার অংশ। কোমলমতী শিশুসহ শিক্ষার্থীদের মনে মাতৃভাষার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাদ্রাসাসহ প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা উচিত। জেলায় এতোগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। শহীদ মিনার নির্মাণে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করবো। প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে। সেইসাথে স্থানীয়ভাবে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর হারিনাতেলী আরএম দাখিল মাদ্রাসায় ২০১৪ সালে স্থ্াপিত শহীদ মিনার। মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করেন শহীদ মিনারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

নাগরপুরে দু''পক্ষের সংঘর্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নি সখীপুর বনে দুর্বৃত্তের আগুন, বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী কালিহাতীতে মে দিবস পালিত মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ, বৃদ্ধ প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর, থানায় মামলা গোপালপুরে বিদেশ ফেরত পুনরেকত্রীকরন শীর্ষক কর্মশালা নাগরপুরে খাদ্যভিত্তিক পুুষ্টি (ফলিত পুষ্টি) বিষয়ক প্রশি করটিয়া হাটে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে লাশ হলেন বাবা ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৪ নেতা গোপালপুরে হিটস্ট্রোকে চা বিক্রেতার মৃত্যু  নাগরপুরে বালুবাহী ট্রাক্টর কেড়ে নিল যুবকের প্রাণ গোপালপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত  হিটস্ট্রোকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু, নির মওলানা ভাসানীর মাজারের দানবাক্সে মিলল ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ট

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি