টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যার্তরা চরমভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এখনও অর্ধলক্ষাধিক পরিবার ত্রাণ সহায়তা পায়নি। অন্যদিকে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় এখনও ৭১ হাজার পরিবার ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূঞাপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮০ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বিপরীতে উপজেলায় ৮৫ মেক্ট্রিকটন চাল, নগদ ১ লাখ ২০ হাজার, গো-খাদ্যের জন্য ৩০ হাজার, শিশু খাদ্যের জন্য ৩০ হাজার ও শুকনো খাবার ৫০০ প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে ৬৫ মেক্ট্রিকটন চাল ৬ হাজার ৫শ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নগদ টাকা, শিশু খাদ্য ও শুকনো খাবার প্যাকেটও বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২০ মেক্ট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে। হিসেব মতে, উপজেলায় এখনও ত্রাণ সহায়তা পায়নি ৭১ হাজার ৫০০ পরিবার।
জানা গেছে, ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিশেষ করে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেকেই। বন্যার্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার সংকট। বসত ঘরে পানি উঠায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে উচুঁ বাঁধ ও সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এতে ব্যাপক বৃষ্টিতে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে বহুগুনে। বন্যার পানিতে গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো নষ্ট হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যমুনার পানি কমতে থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। এছাড়া ভাঙন আতঙে রয়েছে কয়েকশ পরিবার।
গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের তাজু শেখ বলেন, বন্যার পানি ঘরে উঠায় ব্যাপক কষ্টে দিন পার করছি। ঘরে রাখা ধানগুলো নৌকাযোগে অন্যত্রস্থানে নিতে পারলে বাড়ির সব কিছু ভিজে গেছে। পানিবন্দি হলেও এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। কেউ খোঁজও নেয়নি।
রেহাই গাবসারা গ্রামের আয়নাল হক, কবির ও মালেক বলেন, শুধু আমি একাই নই এই গ্রামের অনেকেই ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া গ্রামের বাবলু বলেন, ত্রাণ সহায়তা তো দুরের কথা এক ছটাক চিড়াও পায়নি।
খানুরবাড়ি গ্রামের দয়াল বেপারী বলেন, বন্যার পানিতে বাড়ির টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। কোন ধরণের ত্রাণ সহায়তা পায়নি।
গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, গাবসারা ইউনিয়নের ১৩ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত। এরমধ্যে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে সাড়ে ২৪ মেক্ট্রিকটন চাল বরাদ্দ পেয়েছি সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এতে আংশিক পুরণ হয়েছে মাত্র। এখনও অনেক পরিবার ত্রাণ সহায়তার বাইরে রয়েছে।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বাবলু বলেন, যা ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছি তা দশভাগের একভাগও পূরণ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাসরীন পারভীন বলেন, বন্যার্তদের জন্য ৮৫ মেক্ট্রিটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৬৫ মেক্ট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...