টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সোনালিয়া গ্রামে কবিরাজ মৌ. মো. মোশারফ হোসেন মুন্সীর নানা কর্মকান্ডে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ কবিরাজির নামে মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মোশারফ মুন্সী।
অন্যদিকে কবিরাজ মোশারফ মুন্সী দাবি করছেন তিনি রোগীদের সুস্থ করে ১৯টি দুষ্ট জ্বীন বন্দি করে রেখেছেন। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
মৌলভী মো. মোশারফ হোসেন মুন্সীর ছেলে মোমিনুল ইসলাম জানান, তার বাবা প্রায় ৩০ বছর যাবৎ তিনি নানা রোগের চিকিৎসা করছেন। আগে উত্তর পাড়া ছিলেন, গত ৪ বছর ধরে সোনালিয়া দক্ষিণ পাড়া বাড়ি করে সেখানেই চিকিৎসা করছেন।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দূরারোগ্য রোগের চিকিৎসার জন্য লোকজন আসে। চিকিৎসায় সুফল না পেলে লোকজন তো আর আসতোনা বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি জানান, পুত্র সন্তান ধারণ, বন্ধ্যাত্ব, স্বামী-স্ত্রীর কলহ দূর করে মহব্বত সৃষ্টি করা, জ্বীন-পরীর আছর থেকে মুক্ত করা, দূরারোগ্য মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক-আলসারের জন্য পানিপড়া, তাবিজ ও ঝাড়-ফুঁক দিয়ে থাকেন। তার মতে, আরোগ্য করান উপরওয়ালা, মোশারফ মুন্সী উছিলা মাত্র।
মৌলভী মো. মোশারফ হোসেন মুন্সী (৮৮) জানান, রোগির শরীরে পড়াপানি ছিটালেই বুঝতে পারা যায় সেটা ভদ্র ও শান্ত জ্বীন নাকি বদরাগী দুষ্ট জ্বীন- সে অনুযায়ি চিকিৎসা দেন। ভদ্র ও শান্ত জ্বীন পড়াপানি ও পবিত্র কুরআনের আয়াত পড়ে ফুঁক দিলে চলে যায় আর বদরাগী ও দুষ্ট জ্বীনগুলোকে তিনি মন্ত্র বলে বোতলে বন্দি করে রাখেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০-৫৫টি জ্বীনে ধরা রোগির চিকিৎসা করেছেন। এরমধ্যে ১৯টি দুষ্ট জ্বীনকে তিনি বোতলে বন্দি করে রেখেছেন বলেও দাবি করেন।
মানিকগঞ্জের নুরুল ইসলাম দুলালের শরীরে এবং বাড়িতে একটি দুষ্ট জ্বীনের উপদ্রব ছিল। সর্বশেষ গেল অমাবশ্যায় সেই জ্বীনকে তিনি বোতলে বন্দি করেন। রোগিরা সবাই সুস্থ হয়েছেন, বর্তমানে ভাল আছেন বলেও জানান তিনি।
সোনালিয়া গ্রামের তারা মিয়া, আব্দুল লতিফ, মাখন মিয়া, বাবুল হোসেন, মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, মৌ. মো. মোশারফ হোসেন মুন্সী গত ৪ বছর আগে সোনালিয়া গ্রামে এসে বাড়ি করেন। এর পর থেকে দৃশ্যত তার কোন আয়-রোজগার নেই। ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে তিনি কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করেন।
কবিরাজির নামে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতারণার শিকার হওয়া রোগিদের বাড়ি দূরে ও জ্বীনের ভয়ে মোশারফ মুন্সীকে কেউ কিছু বলার সাহস পায়না।
তিনি নিজ বাড়ির পাশের সরকারি খাল ভরাট করে নূরে মাদীনা নামে একটি মাদ্রাসা খুলেছেন। ওই মাদ্রাসায় সপ্তাহের প্রতি বুধবার যিকির এবং প্রতি ইংরেজি মাসের দ্বিতীয় বুধবার মাসিক এসলাহী (আতœশুদ্ধিমূলক) এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। আতœশুদ্ধিমূলক এজতেমায় নির্ধারিত ব্যক্তিরা ব্যতিত অন্য কেউ অংশ নিতে পারেনা। অংশ নেয়া লোকজনও বাইরে এসে ভিতরে আতœশুদ্ধির জন্য কি কি করা হয় তা প্রকাশ করেনা। কী যে হচ্ছে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে ধীরে ধীরে তার মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...