রাত ১২টা ১ মিনিট। অন্ধকার, নিরব টাঙ্গাইল। তবে এই নিরবতা ভেঙ্গে নতুন আলোয় জীবনের একটি স্মরনিয় দিনের অপেক্ষায় টাঙ্গাইলবাসী।
আজ ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার। টাঙ্গাইলবাসীর জীবনের একটি স্মরনিয় দিন। টাঙ্গাইল জেলার প্রানের স্পন্দন লৌহজং নদী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযানের দিন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ও সামাজিক আন্দোলনকর্মীদের অজস্র ক্লান্তিভরা দিনের অবসান ঘটিয়ে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতার এই দিনটির অপেক্ষায় রয়েছে সাধারন মানুষ।
আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযানে কত মানুষ অংশ নিবে, তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও এটা খুব সহজেই আঁচ করা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের সমাগম হবে। থাকবে উৎসুক জনতাও।
অভিযানকে কেন্দ্র করে হইহইরই পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলনকারী কর্মীদের মাঝে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের এই উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহযোগি হিসেবে বরিশাল সিটিজেন জার্নালিস্ট টিম এর একটি দল টাঙ্গাইল এসে পৌঁছেছেন।
তারা সোমবার টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন আয়োজিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় অংশ নেয়। এসময় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও সিটিজেন জার্নালিষ্ট ফোরামের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এরই সাথে আরো একটি দল ইতিমধ্যে বরিশাল থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। যারাও অংশ নিবে এই উদ্ধার অভিযানে।
এছাড়াও রাজধানী ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এই অভিযান কার্যক্রম পর্যবেক্ষনে উপস্থিত থাকছেন বলেও জানাগেছে।
অভিযানকে কেন্দ্র করে পুরোদমে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন, সামাজিক আন্দোলনকারী কর্মীরা, জেলার ১২টি উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং লৌহজং উদ্ধার কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে সমর্থনকারী টাঙ্গাইলবাসী।
ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসারবৃন্দ লৌহজং নদীর তীরবর্তি অবৈধ স্থাপনাযুক্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
তবে অভিযানের আগের দিনও স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যেগে লৌহজং তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনার অনেক মালিকরাই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। যা এই উদ্ধার কার্যক্রমকে করেছে আরো গতিশীল।
লৌহজং নদী উদ্ধার অভিযানের আগেই টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব হোসেন যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার খবরে অনেকটাই চাঙ্গা মনোভাবে রয়েছে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মীরা। তাদের মতে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম যে সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে তারই একটি অংশ হিসেবেই জেলা প্রশাসকের পদোন্নতিকে ভাবছে তারা।
দীর্ঘ আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযান কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে। এই উদ্ধার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ দিনের আন্দোলন, জেলা প্রশাসনের সময়োপযোগী উদ্যেগ ও সকল শ্রেনী পেশার মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহন।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব হোসেন এর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ থেকে নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম অনেকাংশেই সফলতার মুখ দেখেছে। অবৈধ দখলকারীরা স্বেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ায় এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক অভিযানের পূর্বেই সফলতা পেয়েছে।
তবে চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের দিন আজ। আজ থেকেই লৌহজং নদীর চার পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু হবে। সেই সাথে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে লৌহজং নদী এমনটাই আশা টাঙ্গাইলবাসীর।
তবে উদ্ধার অভিযান যেন মাঝপথে থেমে না যায় এমন দাবি টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষের।
জেলা শহর টাঙ্গাইলের প্রানের স্পন্দন লৌহজং নদী রাজধানী ঢাকার হাতির ঝিলের আদলে আবারো শহরবাসীর কাছে নতুন রুপে ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধ দখলকারীদের দাপটে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া লৌহজং নদী কি আবারো প্রাণ ফিরে পাবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল অনেকের মনেই। অনেকেই নানা ভাবে বিচার বিশ্লেষন করেছে এই অভিযানকে নিয়ে। কারো কারো মনে হয়েছিল এই কার্যক্রম নিয়ে হবে কোটি টাকার বানিজ্য। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ বাস্তবে রুপ নিচ্ছে এই লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম।
বাতাসে নানা কথা ঘুরপাক খেলেও বাস্তবে তার মিল নেই কোনটিরই। সব কিছুকে দূরে ঠেলে দিয়ে যেন কঠিন এ যুদ্ধে মনোনিবেশ করেছিলেন প্রধান সেনাপতির ভূমিকায় থাকা জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব হোসেন।
জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে ঐক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তিনি তার যুদ্ধকে দিয়েছে নতুন রুপ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা অনুযায়ী দেশের সকল নদী-নালা-খাল-বিলকে উদ্ধার করার অংশ হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্মসূচীর স্থান পেয়েছে লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রম। যা দেশ-বিদেশে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসক চাইলে একক ভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারতেন। তবে তিনি এই কার্যক্রমকে দিয়েছেন সামাজিক আন্দোলনের রুপ- এমনটাই দাবী এই উদ্ধার কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের।
তবে জেলা প্রশাসনের অনেকেই দাবি করে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক নিজেই চেয়েছেন লৌহজং উদ্ধারে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোক। আর যারা অবৈধ দখলকারী, তারাও তাদের ভূল উপলব্ধি করে সংশোধনের এগিয়ে আসুক। এ জন্যই উদ্ধার কার্যক্রমে সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে বারবার।
লৌহজং নদী উদ্ধার অভিযানে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি যিনি এই কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন তিনি হলেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী রতন সিদ্দিকী। যিনি নিজ উদ্যগে লৌহজং নদীর তীরবর্তী দখলদারদের স্বেচ্ছায় অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বার বার মাইকিং করেছেন। সেই সাথে এই আন্দোলনকে আরো গতিশীল করে তুলতে আয়োজন করেছিলেন লৌহজং নদী উদ্ধার কার্যক্রমের নানা সময়ের কর্মযজ্ঞ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া শহর জুড়ে এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন বারবার।
কোন স্বার্থ নয়, শহর ও লৌহজং নদীকে ভালোবেসেই তিনি এই কর্মযজ্ঞ করে গেছেন বলে তার অনেক সহকর্মীই দাবি করেছেন।
এছাড়া এই আন্দোলনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গতিশীল করেছেন আরো কিছু সামাজিক কর্মী। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সাজ্জাত খোশনবীশ, সাংবাদিক রাশেদ খান মেনন, নওশাদ রানা সানভী, ডা. জহিরুল ইসলাম জহির অন্যতম।
আনুষ্ঠানিক উদ্ধার অভিযান বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী রতন সিদ্দিকি নদীকে মায়ের সাথে তুলনা করে বলেন, বর্তমানে লৌহজং নদী বৃদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি সন্তানের যেমন বৃদ্ধ বাবা-মাকে সেবা করা উচিত, ঠিক তেমনি ভাবেই আমরা লৌহজং নদীকে ভালোবাসা দিয়ে আবারো প্রানচঞ্চলতায় ভরে তুলতে চাচ্ছি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই লৌহজং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে দাবি করে তিনি বলেন, লৌহজং নদী উদ্ধার হলে শহরের পরিবেশ যেমন রক্ষা হবে তেমনি শহরবাসী সুস্থবায়ু পাবে। এছাড়া শহরবাসী লৌহজং নদীর তাজা মাছ ও পাড়ের সবজি খেতে পারবে।
এ নদীর প্রানচঞ্চলতার মধ্য দিয়ে শহরের আর্ত্ম-সামাজিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন ঘটবে বলেও তিনি দাবি করেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...