১১:৪৩ পিএম | টাঙ্গাইল, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

মধুপুরে পিইসিই ও এবতেদায়ী পরীক্ষা

বাল্যবিয়ে আর দারিদ্র্যতায় ঝড়ে পড়েছে ২০৬ শিক্ষার্থী

এস এম শহীদ | টাঙ্গাইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৬ | | ১১১৭
, টাঙ্গাইল :

রোববার শুরু হওয়া দেশের বৃহত্তম পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক ও এবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (পিইসিই) তে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ১৮ টি কেন্দ্রের ২০৬ পরীক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। এদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ১০০ ও ছেলে রয়েছে ১০৬ জন।

যাদের অনেকেই দারিদ্রতার কারণে গার্মেন্টসে, দোকানে ও গৃহস্থালী কাজে যুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়েছে।

পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছাত্রীদের মধ্যে ৬৬ জন প্রাইমারী এডুকেশন কমপ্লিশন এক্সামিনেশন (পিইসিই) ও ৩৪ জন এবতেদায়ী (দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার্থী। ছেলেদের মধ্যে পিইসিইতে ৬০, এবতেদায়ীতে ৪৬।

অনুপস্থিতির কারণ জানতে গিয়ে উপজেলার ১৮ টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রাথমিক স্তরের এ চিত্র পাওযা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১০৯টি সরকারি (সম্প্রতি রেজিস্ট্রার থেকে সরকারিকরণ বিদ্যালয়সহ), ১০৭ টি কিন্ডার গার্টেন ও অন্যান্য এবং ২৬টি এবতেদায়ীসহ ২৪২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৬৮১ শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিতে ডিআর ভুক্ত হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্রায় অনুরূপ সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ১৭৯ জন। এবার পরীক্ষার্থী ৪৯৮ জন কমেছে। অথচ ২০১৪ সালের ৫ হাজার ৭১৬ জন থেকে বেড়ে হয়েছিল ৬ হাজার ১৭৯।

এবার স্কুল পর্যায়ে ছেলে পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৩১০জন, যা গতবার ছিল ২ হাজার ৫১২ জন। মেয়ে পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৫৮০ জন, গতবার ছিল ২ হাজার ৮৩৮ জন।

এবতেদায়ী স্তরে এবার ৭৯১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ৩৬৯ ও মেয়ে ৪২০। গতবার ছিল ৮২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪১২ ছেলে ও ৪১৭ মেয়ে। এ পরিসংখ্যান থেকে উপজেলার স্কুলগামী শিশু বেশ কমে যাওয়ার ধারনা পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাগন্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবিনাকে পরিবার কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকগণ চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাননি। তাদের সন্দেহ- পরিবারের লোকজন তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।

আম্বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী জাহানারা অনুপস্থিত একই কারণে। পিরোজপুর ইয়াকুবিয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসার হামিদা, সুমাইয়া’র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারাও পরীক্ষা দিচ্ছে না।

ধলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও বানিয়াবাড়ী স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার এক ছাত্রীর বিয়ে হওয়ায় তারা পরীক্ষায় অনুপস্থিত বলে জানা গেছে।

গাছাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিয়ে হয়ে যাওয়া এক ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে বলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

এক শিক্ষক নেতা জানান, অনেক চেষ্টা করেও বাল্য বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় অথবা সুবিধা মতো সময় গোপনে এই শিশু শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিয়ের রেজিস্ট্রির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, শুধু বিয়ে নয় পারিবারিক ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই অল্প বয়সে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে।

পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোকনকে দুই হাজার টাকা বেতনে এলাকার একটি দোকানে কর্মচারি হতে হয়েছে। একই বিদ্যালয়ের সুজিত বর্মণ, মাগন্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাজিম উদ্দিন ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করছে।

ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া মায়ের সাথে দড়িহাতিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাথী ঢাকায় গিয়ে বাসা বাড়ির কাজ করছে।

বেলুটিয়া কেন্দ্রে অনুপস্থিত ১৬ জনের ৮/১০ শিক্ষার্থীর একই রকম পরিস্থিতির শিকার বলে জানালেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল এক শিক্ষক।

রানিয়াদ দাখিল মাদরাসার দুই ছাত্র ও এক ছাত্রী দারিদ্রতা আর অসচেতনতার জন্য ছিঁটকে গেছে শিক্ষা থেকে। এমনটি জানালেন শিক্ষক আব্দুর রহিম।

এরকম অনুপস্থিতির একটি বিশেষ অংশ গামেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে এলাকা ত্যাগ করেছে বলেও জানা গেছে।

লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে কেউ কেউ নিজেদের ঘর গৃহস্থালী সামলাতেও ব্যস্ত বলে একাধিক শিক্ষক নিশ্চিত করেছে।

পশ্চাৎপদ গড়াঞ্চলের এ জনপদে অভাবীদের মধ্যে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানোর আগ্রহ কমার প্রবনতা বাড়ছে। এছাড়া মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের কথিত দায়িত্ব সাড়ে অভিভাবকগণ। কিন্তু পরে নানা জটিলতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।

শিক্ষক জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, অভিভাবকদের অচেতনতা এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএইচএম রেজাউল হক জানান, গতবারের চেয়ে এবার শিক্ষার্থী কিছু কমেছে। কিন্তু উপস্থিতির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বিদ্যালয় সংখ্যা (কিন্ডার গার্টেন) কমলেও কেন্দ্র সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সবদিক দিয়ে আরও উন্নতির প্রত্যয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, বাল্য বিয়ের ব্যাপারে আমরা খুবই সজাগ। খবর জানার সাথে সাথে ইতোমধ্যে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। শিক্ষকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে নানামুখী ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে বেশি উদ্যোগী হতে হবে বলেও তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ দুঃস্থদের মাঝে টাঙ্গাইল মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ এর ঈদ ঈদের ছুটিতে মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বেড়েছে চোরের উপদ্রব জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা ইউনিটের ইফতার ও দো মির্জাপুরে অবৈধভাবে বালুকাটায় ৪ জনের জেল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মির্জাপুরে দোয়া ও ইফতার ম ঈদে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে যানজটের আশঙ কুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টার থেকে ১৬ বস্তা নকল সিগারেট জব

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি