টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দূর্গাপুর ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ী উলুফুলের তৈরী ফুলঝাড়–র কারখানা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে স্বাবলম্বী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছে এসব কারখানার সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিক উভয়েই।
জানা যায়, ২টি ইউনিয়নে ১৫-১৬টি ফুলঝাড়– কারখানা রয়েছে। নারীপুরুষ মিলে ৫০০-৬০০ শ্রমিক এই কাজের সাথে জড়িত। বাংলাদেশে প্রথম এই ফুলঝাড়– পেশার উৎপত্তি হয় বরিশালে। চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর কারখানা গড়ে উঠে।
বাসা বাড়ি, স্কুল, কলেজ, দোকানপাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসে রয়েছে ফুলঝাড়–র বিশেষ কদর। বাঁশ দিয়ে তৈরী ঝাড়–র পরিবর্তে ফুলঝাড়– পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে প্রতিনিয়ত ব্যবহার হয়।
রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ইছাখালি, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালি সহ পাহাড়ি বিভিন্ন অঞ্চলে ফুলঝাড়– চাষ করা হয়। একসময় এসব অঞ্চলে ফুলঝাড়– আপনাআপনি জন্মাতো। কিন্তু বর্তমানে ফুলঝাড়– বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।
ফুলঝাড়–র পাহাড়ি নাম উলুফুল। উলুফুল মহাজনের নিকট হতে ক্রয় করে এসব এলাকার কারখানার মালিকরা নিয়ে আসে। এক ট্রাক উলুফুলের দাম ৭-৮ লক্ষ টাকা। কারখানায় উলুফুল প্রক্রিয়াজাত করে ফুলঝাড়– হিসেবে বাজারজাত করা হয়।
কালিহাতী উপজেলার মধ্যে দূর্গাপুর ইউনিয়নে অধিকাংশ কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি যমুনা পূর্ব থানার দক্ষিণে ২টি কারখানা রয়েছে।
প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে পাইকারি ও হকারের মাধ্যমে খুচরা ১২-১৩ হাজার ফুলঝাড়– বাজারজাত হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুলঝাড়– ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
ঢাকা সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় জেলাতে ফুলঝাড়–র ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রহিমা বেগম নামে এক শ্রমিক বলেন, একটা ঝাড়– তৈরী করার জন্য এক টাকা করে পাই। বাড়ির কাজ করার পর প্রতিদিন ১০০-১২০ টাকা আয় হয়।
জব্বার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, সারাদিনে ৪০০-৫০০ টাকা কাজ করি। আমি আর আমার স্ত্রী ৫ বছর যাবত এই কাজের সাথে জড়িত। সংসারে আমাদের দুইটি সন্তান আছে। তারা স্কুল, কলেজে পড়ে।
ফুলঝাড়– ব্যবসায়ি লুৎফর রহমান বলেন, উলুফুল ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে আসি। তারপর ঝাড়–, পাইপ, কসটেপ, ফিতা, ক্যাংক ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে তৈরী করে বিক্রয় করা হয়। ৫ বছর যাবত এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। ফুলঝাড়–তে খুব বেশি লাভ নেই। তারপরও স্বচ্ছলভাবে চলতে পারি।
ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন জানান, ২০০১ সাল থেকে ফুলঝাড়– ব্যবসা সাথে জড়িত আছি। ৭ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে এই ব্যবসায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বিনোয়োগ আছে। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে আমরা আরোও ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতাম। পাশাপাশি অনেক বেশি শ্রমিক কাজ করতে পারতো।
দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েক’শ পরিবার এই ফুলঝাড়–শিল্পের উপর নির্ভরশীল এবং এ কাজের যুক্ত থেকে তাঁরা এখন স্বাবলম্বী। সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে এই শিল্পের প্রসার আরো ব্যাপক ভাবে বিস্তর লাভ করতো। এতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হত। বেকারত্ব কমে যেতো।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নদী পারের মানুষগুলো সেই সুদূুর দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে ঝাড়– এনে ব্যবহারের উপযোগী করে বাজারে বিক্রি করে। সরকার ঝাড়ুশিল্পে যদি সহজ শর্তে বা সুদমুক্ত ঋন প্রদান করে তাহলে হাজার হাজার পরিবার এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হবে। যার ফলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...