ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-এর অন্যতম পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশিদ বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল, সর্বত্রই বিনোয়োগের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। ফলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন ঘটছে। আর এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক নয়, আঞ্চলিক উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। ্এজন্য সরকারের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগের ধরণও পাল্টাতে হবে।
নিউইয়র্কে এনআরবি বিজনেস নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগে উজ্জল সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ এসব কথা বলেন।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ একটি রেষ্টুরেন্টের মিলনায়তনে ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় উল্লেখিত সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
এনআরবি বিজনেস নেটওয়ার্ক’র অন্যতম পরিচালক হাসানুজ্জামান হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক ড. মো. আকরাম হোসেন ও সোনালী এক্সচেঞ্জ ইনক’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ আতাউর রহমান।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক ও জেবিবিএ নিউইয়র্ক’র সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ডা. আব্দুল লতিফ, মির্জা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনার পরিচালিনা করেন এনআরবি বিজনেস নেটওয়ার্ক-এর আরেক পরিচালক মোশাররফ হোসাইন।
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা না থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে মাটি থেকে শুরু করে সবকিছুই উর্বর। এই উর্বরতা কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু শুধু শুধু কথায় কাজ হবে না। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে চান কিন্তু এজন্য যে সকল নিরাপত্তার দরকার তা তো নিশ্চিত করা হয় না। দূর্নীতি, চাঁদাবাজী, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর লাল ফিতার দৌরাত্ব, রাজনৈতিক প্রভাব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।
বক্তারা বলেন, প্রবাসে দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেমিনারগুলোতে আলোচনা হয়, সমস্যা তুলে ধরা হয় কিন্তু তার কোন বাস্তবায়ন হয় না, সরকার সহ সংশ্লিষ্টরা প্রবাসীদের কথাগুলো শুনেন না।
সেমিনারে অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ বলেন, দর্শনের সাথে ব্যবসার কোন সম্পর্ক নেই। তবে বিনিয়োগের জন্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ৬/৭ বছরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুন হয়েছে। দেশে মানুষ এখন ‘লং উইকেন্ড’-এর কথা ভাবছে।
অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার সময় আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলোকে যখন নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিলো।
তিনি বলেন, আমাদেরকে ঢাকা কেন্দ্রীক উন্নয়নের চিন্তা-ভাবনা পাল্টিয়ে আঞ্চলিক উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে রাজধানী ঢাকা যানজট সহ অন্যান্য সমস্যার যেমন সমাধান হবে তেমনী, দেশের অন্যান্য অঞ্চলও উন্নয়নের মুখ দেখবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য যেকোনভাবে জব (চাকুরী) সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়ার উচিৎ।
ড. হাসিবুল রশিদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য সকল প্রকার অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরণও পাল্টে গেছে। আদমজী মার্কা স্টাইলের ফ্যাক্টরী আর নেই। দেশব্যাপাী নতুন নতুন ফার্ম গড়ে উঠেছে। তবে আর্থিক স্থিতিশীলতরার জন্য প্রথমে ছোট ছোট কল-কারখানা গড়ে তোলাই ভাল।
১৯৮৫-৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে আমেরিকার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠা শক্তিশালী অবকাঠামোর কারণেই আমরা আজকের আমেরিকা দেখতে পাচ্ছি। আমাদেরকে হতাশ হলে চলবে না, আশাবাদী হতে হবে।
ড. আকরাম হোসেন বলেন, শুধু ব্াংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেকোন দেশেই বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী অবকাঠামো আর সঠিক ‘পলিসি’। বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন পলিসি’ ভাল কিন্তু ব্যবস্থাপনা খারাপ। তিনি ছোট-খাটো ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যদিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নতুনদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত তিনি বলেন, প্রবাসীরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের মন্দ দিক তুলে ধরলেও আবার তারাই দেশে বিনিয়োগ করছেন। এটা ভাল দিক, দেশপ্রেমের জন্যই এটা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসানুজ্জামান হাসান সেমিনারে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের সাথে প্রবাসীদের মধ্যে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে যোগাসূত্র জোড়দার করাই এনআরবি বিজনেস নেটওয়ার্ক-এর মূল লক্ষ্য ও কাজ। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনআরবি বিজনেস নেটওয়ার্ক দল-মতের উর্ধ্বে থেকে কাজ করে চলেছে।
সেমিনারে মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাম এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বেনু, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মো. আজহার হোসেন, জন ফাহিম, মনিরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আব্দুল সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হিরা সহ নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...